এছাড়া পুকুরের চারপাশে রোপণ করছেন লাউ, বেগুন, পেঁপে, কচু, কলা, টমেটোসহ নানা প্রজাতির শাকসবজি। পুকুরের মাছ ও সবজি বিক্রি করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি জমিতে উৎপাদন হচ্ছে ধান। ধানের লোকসান পুষিয়ে উঠতে কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ও সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ২টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের ৩শ’ চাষি বিকল্প এ পদ্ধতিতে চলতি বোরো মৌসুমে চাষাবাদ শুরু করেছেন।
তাই তিনি সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় পানি সাশ্রয়ী কার্যকরী কৃষি অনুশীলন প্রকল্পের আওতায় জমির এক কোনায় ১ শতকের একটি মিনি পুকুর খনন করেছেন। ওই পুকুরে তিনি বৃষ্টির পানি ধরে রেখেছিলেন। সেই পানি দিয়ে জমিতে সেচ দিয়েছেন। তাতে তার সেচ খরচ ২ হাজার টাকা বেঁচে গেছে। এছাড়া ওই পুকুরে তিনি মাছ চাষ করেছেন। পুকুরের চারপাশে লাগিয়েছেন নানা প্রজাতির শাকসবজি। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তিনি বাজারে ২ হাজার টাকার মতো শাকসবজি ও ৩ হাজার টাকার মতো মাছ বিক্রি করেছেন। এতে তার ৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে। আবার সেচ খরচ বেঁচে গেছে ২ হাজার টাকা।
চান্দু বিশ্বাসের মত মহাদেবপুর গ্রামের নাছিম মন্ডল, বেজপাড়া গ্রামের সুফল ঘোষ, সুন্দরপুর গ্রামের বজলুর রহমান, আশাদুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তারসহ দুই ইউনিয়নের ৩শ কৃষক এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘২টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের ৩শ’ জন চাষিকে ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলন কমিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা, বোরোর পরিবর্তে রবি শস্য লাগাতে উদ্বুদ্ধ করা এবং ভেজা-শুকনা পদ্ধতিতে চাষিদের আগ্রহী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।’
সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শিবুপদ বিশ্বাস বলেন, ‘জাপান ফান্ড ফর গ্লোবাল এনভায়রমেন্টের (জেএফজিই) আর্থিক সহযোগিতায় ২০১৯ সাল থেকে শেয়ার দ্য প্ল্যানেট অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় কালীগঞ্জের ২০ গ্রামে পানি সাশ্রয়ী কার্যকরী কৃষি অনুশীলন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়ে আসছে। তারা নিয়ামতপুর ও সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ২টি ইউনিয়নের ১০০ জন চাষিকে ১০০টি পুকুর কেটে দিয়েছেন। ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রতিটি পুকুর খনন করা হয়েছে। পুকুরে পানি কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, কীভাবে ক্ষেতে দিতে হবে, পুকুর পাড়ে কিভাবে সবজী উৎপাদন করতে হবে এসব বিষয়ে তাদের ওরিয়েন্টেশন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বীজ সংরক্ষণের জন্য তাদের ড্রাম প্রদান ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের লাভজনক সফল উৎপাদনে বোরোর পরিবর্তে রবি শস্য চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহিদুল করিম বলেন, ‘সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় যেভাবে পুকুর খনন করা হচ্ছে তাতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া ভুগর্ভস্থ পানির চাপও কম হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তারা সেচ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। পুকুরে মাছ চাষ ও পুকুর পাড়ে শাক-সবজি উৎপাদন করতে পারবেন। এটা একটা ভালো দিক।’ তবে ওই পানি দিয়ে শতভাগ সেচ দেওয়া সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন। শুস্ক মৌসুমে কিছুটা সেচ অন্য ভাবে দিতে হবে। কৃষি বিভাগও বিভিন্ন সভা সেমিনারে কৃষকদের এভাবে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করছেন বলেও তিনি জানান।