শ্বশুরবাড়ি থেকে মোটরসাইকেল পাচ্ছেন সেই ফারহানা

গায়ে হলুদের দিনটাকে অন্যরকমভাবে স্মরণীয় রাখতে চেয়েছিলেন যশোরের মেয়ে ফারহানা আফরোজ। সে কারণে ১৩ আগস্ট শহরব্যাপী ভাই-বোন, বন্ধুদের নিয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেন তিনি। ২০টির বেশি মোটরবাইক নিয়ে জমকালো সাজে শহরব্যাপী তার মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নজর কাড়ে স্থানীয়দের। পরে সেই শোভাযাত্রার ছবি ও ভিডিওচিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হয়। অনেকে প্রশংসা করলেও কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্যও করেছেন।   

ফারহানা বলেন, ‘গায়ে হলুদের ছবি ভাইরাল হওয়া এবং নেটিজেনদের বিরূপ মন্তব্য আমার জীবনে কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে বোঝাপড়াটা ভালো। ফলে আগামীতেও আমি বাইক রাইডিং অব্যাহত রাখবো।’
হলুদে বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন ফারহানা




১৪ আগস্ট পাবনার কাশিনাথপুরের বাসিন্দা ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হাসনাইন রাফির সঙ্গে বিয়ে হয় যশোর শহরের সার্কিট হাউজ এলাকার মেয়ে ফারহানা আফরোজের। আগের দিন ছিল ফারহানার গায়ে হলুদ। গায়ে হলুদের দিনে শহরজুড়ে বন্ধুবান্ধব ও সঙ্গীদের নিয়ে বাইক র‌্যালি করেন কনে ফারহানা। ফটো তোলার দায়িত্বে থাকা তারই বন্ধু নাহরুল হায়াত তরু ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন। এরপর ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের ছবি ভাইরাল হয়। 

ফারহানা বলেন, ‘সবাই নেচে-গেয়ে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করেছি। আমি যেহেতু বাইক চালাতে পারি, তাই বাইক চালিয়ে অনুষ্ঠান করেছি। ব্যতিক্রমী কিছু করার ভাবনা থেকেই এমন আয়োজন। এটি আমার নিজস্ব উদ্যোগে করেছি।’ 
হলুদে বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন ফারহানা

যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৩ সালে যশোর আব্দুর রাজ্জাক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ফারহানা। এখন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) থেকে এইচআর-এ এমবিএ করছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে বাইক চালাই। মূলত বাড়িতে সাইকেল ও প্রাইভেটকার চালানো শেখা হয় ছোটবেলাতেই। বাবার মোটরসাইকেলটিও চালানোর একটা ঝোঁক ছিল। তাই বাবার অজান্তেই কোনও প্রশিক্ষক ছাড়াই মোটরসাইকেল চালানো শিখি। ২০১৩ সালে ঢাকায় যাওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে বাইক চালিয়ে বিষয়টি ভালোভাবে রপ্ত করি। এরপর নিজে স্কুটি কিনি।’

হলুদে বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন ফারহানা
তিনি বলেন, বাইক ‘র‌্যালির ছবি ফেসবুকে আসার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। তারা আমার বাইক চালানোর বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন। ফলে, তারা ছবি ও ভিডিও দেখে বেশ আনন্দ করেছেন। কিন্তু নেটিজেনরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নিতে পারছেন না। তারা আমার চারিত্রিক সনদ দিচ্ছেন। এটা আমি মানতে পারছি না। যে কারণে ছবি ভাইরাল হওয়ার পর আমি নিজেই বাইক র‌্যালির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করি। সুযোগ পাইলে আমি হেলিকপ্টার চালানোও শিখতাম। সবকিছুই চালানো শিখতাম। স্বামীর পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি নেই।’
শ্বশুরবাড়ি থেকে একটি বাইক উপহার পাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শ্বশুরের প্রতিশ্রুত মোটরবাইকটি ঢাকা থেকেই কেনার ইচ্ছে আছে।’

হলুদে বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন ফারহানা
তরু জানান, তিনি মূলত ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করেন। মফস্বল শহরে এমন ব্যতিক্রমী বিয়ে-গায়ে হলুদের আয়োজন দেখেননি। এই গায়ে হলুদের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই তার কাছে ফোন করছেন। কেউ কেউ প্রশংসা করছেন, কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য করছেন।