যশোরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ কিশোর হত্যা: ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তিন বন্দি কিশোর হত্যা মামলায় কেন্দ্রের চার কর্মকর্তাসহ আট জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে জড়িত অপ্রাপ্তবয়স্ক অপর চার শিশুর বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া একজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এ চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর শহরের চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনসপেক্টর মো. রকিবুজ্জামান।

চার্জশিটে অভিযুক্ত চার কর্মকর্তা হলেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সাবেক তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহ, ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম ও সাইকোসোস্যাল কাউন্সেলর মুশফিকুর রহমান।

অভিযুক্ত কেন্দ্রের চার বন্দি কিশোর হলো গাইবান্ধার খালিদুর রহমান তুহিন, নাটোরের হুমাউন হোসেন, মোহাম্মদ আলী ও পাবনার ইমরান হোসেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তরা হলো চুয়াডাঙ্গার আনিস, কুড়িগ্রামের রিফাত হোসেন, রাজশাহীর পলাশ ওরফে শিমুল ও পাবনার মনোয়ার হোসেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইনসপেক্টর মো. রকিবুজ্জামান বলেন, মামলায় ১৩ জন আসামি ছিলেন। তদন্তশেষে এ ঘটনায় মোট ১২ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে চার কর্মকর্তা ও চার বন্দি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া অপর চার বন্দি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তদন্তে বন্দি কিশোর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সাময়িক বরখাস্ত কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুকের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ মেলেনি। এ কারণে চার্জশিটে তাকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের প্রধান প্রহরী নূর ইসলামকে মারপিটের জেরে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ১৮ বন্দি কিশোরের ওপর কর্মকর্তাদের নির্দেশে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়। এ ঘটনায় বন্দি বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু পরামানিকের ছেলে নাঈম হোসেন, খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি ও বগুড়ার শেরপুরের মহিপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রাসেল হোসেন প্রাণ হারান। এছাড়া গুরুতর আহত হয় আরও ১৫ কিশোর। ওই ঘটনায় নিহত পারভেজ হাসান রাব্বির বাবা রোকা মিয়া কোতোয়ালি থানায় ১৩ জনের নামে মামলা করেছিলেন। আজ এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হলেও কাগজে-কলমে তা দাখিলের দিন উল্লেখ করা হয়েছে ৯ ফেব্রুয়ারি।


আরও পড়ুন:
সংঘর্ষের পর বন্দিরা মার খায় কেন্দ্র কর্মকর্তা ও আনসারদের হাতেও!
‘হাত-পা-মুখ বেঁধে পেটায়, ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়’
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নৃশংসতা দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুর্নীতির বহিঃপ্রকাশ
‘সারা জীবন জেলখানাতে কাটাবো, তবু শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকবো না’
'সংশোধন নয়, অপরাধপ্রবণ হচ্ছে বন্দিরা'