ইলিশের দেখা নেই, হতাশায় মোংলার জেলেরা

ইলিশসহ সব ধরনের মাছের প্রজনন বাড়াতে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে জাল ফেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর আগে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা নিধন বন্ধে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয় মৎস্য অধিদফতর। সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না মোংলার পশুর নদীতে। 

এদিকে ‘ইলিশের খনি’ সুন্দরবনের নদ-নদীতেও মিলছে না ইলিশ। যেটুকু মিলছে তাতে ট্রলার ও তেলের খরচ উঠছে না। ফলে চরম হতাশায় দিন কাটছে মোংলার জেলেদের।

মোংলা উপজেলার চিলা ও জয়মনির ইলিশ ঘাটে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সরেজমিন দেখা যায়, চলতি মৌসুমে ইলিশ শিকারের আশায় জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে দলবেঁধে নদীতে ছুটছেন জেলেরা। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নদীতে ঘুরলেও তাদের জালে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ। 

সারাদিন জাল ফেলে খরচের টাকাও উঠছে না জেলেদের

এই এলাকার জেলে রশিদ হাওলাদার, জাহিদ ব্যাপারী ও জাফর হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ জন নদীতে যাই। গড়ে তিন-চারটা ইলিশ ধরা পড়ে। এগুলোর দাম সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা। ট্রলার ও তেলের খরচের পর তিন-চারশ টাকা থাকে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছি। কিন্তু সারাদিন জাল ফেলেও মাছ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।

মোংলা উপজেলা জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিদুৎ মন্ডল বলেন, লকডাউনের মধ্যে আমরা অন্য কোনও কাজও করতে পারিনি। সরকারিভাবে যে সাহায্য পেয়েছি তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এখন আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

সুন্দরবনের নদ-নদীতে না পাওয়ায় মোংলা বাজারে ইলিশ আসছে চট্টগ্রাম ও বরিশাল থেকে। তবে আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় ইলিশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও ইলিশ না কিনেই অনেকে বাড়ি ফিরছেন।

মোংলা বাজারে ইলিশ কিনতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ছেলে-মেয়ের আবদার পূরণে বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু অতিরিক্ত দাম হওয়ায় কিনতে পারলাম না।’

দাম বেশি হওয়ায় অনেকে ইলিশ না কিনেই বাড়ি ফিরছেন

জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নদীতে স্রোত কমে যাওয়ায় পলি পড়ে গভীরতা কমছে। এ কারণে ইলিশ অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, ইলিশ না পাওয়ার আরও একটি বড় কারণ হচ্ছে, সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে অসাধু জেলেদের বিষ দিয়ে মাছ ধরা। এই পানি খেয়ে ইলিশসহ অন্য প্রজাতির মাছ মারা যাচ্ছে। তাই নদীতে ইলিশ বড় হলেও তারা ওই পানির ভয়ে অন্য রুটে চলে যাওয়ায় পশুর ও সুন্দরবনের নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রউফ বলেন, নদীর স্রোত কমে প্রচুর পলি পড়ে পানি ঘোলা হওয়ায় সুন্দরবনসহ পশুর নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে ইলিশের শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এই রুট পরিবর্তন করে অন্যদিকে চলে যায়। এসব নদীর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশী দেশগুলো যৌথভাবে নদী ব্যবস্থাপনায় সঠিকভাবে কাজ করলে, এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।