সেই চাল নিম্নমানের, ৪ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেলো কমিটি

চুয়াডাঙ্গায় ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিম্নমানের চাল বিতরণে চার কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।

গত ১৮ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভিজিএফ কার্ডধারী ৬০০ জনকে খাওয়ার অযোগ্য দুর্গন্ধযুক্ত ও পচা চাল দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর চাল পাওয়া মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান ১০ হাজার ৫৬০ কেজি নিম্নমানের চাল জব্দ করেন। এ ঘটনায় ২৬ জুলাই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক।

কমিটিতে আরও ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আবু তারেক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা (ডিটিও) সুফি মো. রফিকুজ্জামান, জেলা বাজার তদারকি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলাম।

তদন্ত শেষে ভিজিএফের নিম্নমানের চাল বিতরণে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলাম, সদর উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) মো. আবু বকর ছিদ্দিক, জীবননগর উপজেলা খাদ্যগু দামের ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ ও সদর উপজেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। প্রথমে কমিটিতে থাকলেও তদন্ত চলাকালে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে তাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। এতে বিব্রত হন কমিটির সদস্যরা। অভিযোগ গভীর হওয়ায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রেজাউল ইসলামের বক্তব্য নেয় তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটি আরও ১৩ জনের বক্তব্য নেয়। তারা হলেন- জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. খায়রুল আনাম, পরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএন এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি মো. হাসানুর ইসলাম, বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলি হোসেন জোয়ারদার, প্যানেল চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম, সচিব মো. ফয়জুর রহমান, গ্রাম পুলিশ আবদুল আলী, ভিজিএফ কার্ডধারী মো. মহসীন, মো. নাসির উদ্দিন ও মো. আবদুল খালেক, সদর উপজেলা খাদ্য গুদামের ওসি–এলএসডি মো. আবু বকর ছিদ্দিক, জীবননগর উপজেলা খাদ্য গুদামের ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ ও সদর উপজেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান।

কমিটি সূত্রে জানা গেছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, দুজন ওসি-এলএসডি ও কারিগরি পরিদর্শক নিম্নমানের চালের বিষয়টি সংগ্রহ থেকে বিতরণ পর্যন্ত জানতেন। বেগমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ কর্মসূচিতে বিতরণ করা চাল জীবননগর খাদ্য গুদাম থেকে পাঠানো। জীবননগর উপজেলা খাদ্য গুদামের ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ অসৎ উদ্দেশে স্থানীয় সাথী রাইস মিল, দেশবাংলা ও এঅ্যান্ডজেএম অটোরাইস মিল থেকে চাল সংগ্রহ করেন।

তদন্ত কমিটি মতামত দিয়েছে, ওই চাল নিম্নমানের। অভিযুক্তদের সবাই চাল নিম্নমানের জানা সত্ত্বেও জীবননগর, সদর খাদ্য গুদামে মজুত এবং বেগমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ কর্মসূচিতে সরবরাহ করেছেন। এটা স্পষ্ট যে, জীবননগর ওসি-এলএসডি মো. কাওসার আহমেদ অসৎ উদ্দেশে এই নিম্নমানের চাল গুদামে নেন। যা পরবর্তীকালে বেগমপুর ইউনিয়নে ভিজিএফের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে বিতরণ করা হয়। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।

জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া গেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি শিগগিরই সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে।