প্রথমদিন শিক্ষার্থীদের বরণ করবেন শিক্ষকরা

প্রায় ১৮ মাস পর ১২ সেপ্টেম্বর (রবিবার) খুলছে স্কুল-কলেজ। এতে দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হবে শিক্ষার্থীরা। আর ইতিহাস গড়তে যাওয়া দিনটিতে শিক্ষার্থীদের স্কুলে বরণ করবেন যশোরের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শিক্ষার্থীদের আগমনকে সুন্দর করতে ফুল-কলম দিয়ে এবং তা যদি সম্ভব না হয় অন্তত সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্কুলে আগত শিক্ষার্থীদের করতালি দিয়ে স্বাগত জানাবেন তারা। ১২ সেপ্টেম্বর এসব ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার এ কে এম গোলাম আযম স্কুল প্রধানদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

এদিকে, স্কুল খুলে দেওয়ার ঘোষণার পরপরই যশোরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাজসাজ রব পড়েছে। চলছে ক্লাসরুম, ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম। সরেজমিন শহরের নূতন খয়েরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ক্লাসরুম থেকে শুরু করে গোটা ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে। শিক্ষকরা জানালেন, বাচ্চাদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। অনলাইনে ক্লাস ছাড়াও ইতোমধ্যে বেশকিছু অ্যাসাইনমেন্ট তারা সম্পন্ন করেছে। আর স্কুল খোলার ঘোষণায় শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকরাও অনেক আনন্দিত।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সৈয়দ এহছানুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ক্লাসরুমসহ স্কুলের বারান্দা এবং ক্যাম্পাস কিছুটা অপরিচ্ছন্ন। গত দুইদিন ধরে সেগুলো পরিষ্কারের কাজ চলছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনলাইনে পড়াশুনা আর সশরীরে ক্লাসে উপস্থিতির মধ্যে বিশাল তফাৎ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাচ্চাদের স্কুলে আসা, শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ- সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

বহুদিন পর খুলছে স্কুলের তালা

যশোর সদরের ভেকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন স্কুলে না যাওয়ায় বাচ্চাদের মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। সে কারণে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্কুল কর্মচারীদের নানা ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি শিশুদের খেলাধুলা, বিনোদন এবং স্কুলের সময়সূচি কিছুটা হ্রাস করারও চিন্তা করছে সরকার। আশা করছি, বাচ্চারা আবারও স্কুলমুখী হতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।’

যশোর জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শোয়াইব হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা ক্লাসরুমসহ স্কুল ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নের কার্যক্রম শুরু করেছি। ক্লাস রুটিন এখনও জানানো হয়নি। আশা করছি, দুই-একদিনের মধ্যে সেগুলো পেয়ে যাবো। যদি না পাই, তবে নিজেরাই রুটিন করে নেবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আনঅফিশিয়ালি যেটুকু জানা গেছে, তা হচ্ছে- ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিন। ২০২২ সালের পরীক্ষার্থীদের জন্য শনি, রবিবার এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হবে সোম থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।’

jessore1

জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম বলেন, ‘যশোরের এক হাজার ২৭৯টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ইতোমধ্যে সব নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। বাচ্চাদের মানসিক ও শারীরিক বিষয়াদিকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পঞ্চম শ্রেণির নিয়মিত এবং অন্যদের একদিন করে ক্লাস নেওয়ার নির্দেশনা আসতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘খুলনা বিভাগে ইতোমধ্যে ক্লাস গ্রহণের জন্যে ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। যা দেখে শিক্ষকরা বাচ্চাদের কীভাবে শিক্ষা দেবেন, সেটি ভালভাবে অনুধাবন করতে পারবেন।’

জেলা শিক্ষা অফিসার এ কে এম গোলাম আযম বলেন, ‘জেলায় ৫২৭টি স্কুলের প্রধানকে ইতোমধ্যে স্কুল পরিচালনার বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের বলেছি, বাচ্চারা দীর্ঘদিন পর স্কুলমুখী হচ্ছে; তারা যেন বিষণ্নতায় না ভোগে। সে কারণে তাদের প্রথম দিন যদি সম্ভব হয়, ফুল দিয়ে যেন স্বাগত জানানো। কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে, ১২ সেপ্টেম্বর তারা শিক্ষার্থীদের ফুল দেবে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একটি করে কলম দেবে। এটি একটি দারুণ উদ্যোগ বলে মনে করছি। আর কোনও প্রতিষ্ঠান যদি ফুল-কলম বা অন্যকিছু না দিতে পারে, তবে তারা যেন বাচ্চাদের করতালি দিয়ে স্বাগত জানায়। তাহলে তারা সম্মানিত বোধ করবে।’

তিনি বলেন, ‘আশা করা যায়, শিক্ষার্থীরা আবারও তাদের স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’