পণ্যবাহী ট্রাক হঠাৎ ব্রেক করলেই উঠে যাচ্ছে খুলনা-যশোর মহাসড়কের কার্পেটিং। মাঝেমধ্যে জমাট বেঁধে যায় পিচ ও খোয়া। সংস্কারকাজ শেষ না হতেই সড়কে তৈরি হয়েছে গর্ত। ৩৮ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে একই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, যান চলাচল ও জনদুর্ভোগ কমাতে খুলনা-যশোর মহাসড়ক মেরামতে ৩২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের জুন মাসে কাজ শুরু হয়। এক বছরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে সংস্কারের জন্য দুই দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরই মধ্যে সংস্কার হওয়া নওয়াপাড়া থেকে যশোরমুখী ৩৮ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে উঠে গেছে কার্পেটিং। অতিরিক্ত যান চলাচল ও পণ্য বহনের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ না দেওয়ায় উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং, জমাট বেঁধে যায় পিচ। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে চেঙ্গুটিয়া এলাকায় সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়। এরই মধ্যে কার্পেটিং উঠে গেছে। পরে আবার সংস্কারকাজ শুরু হয়।
তিনি বলেন, ‘যানবাহনের লোড মনিটরিংয়ের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মহাসড়কে প্রবেশের আগেই লোড পরীক্ষার পরিকল্পনা চলছে। লোড নিয়ন্ত্রণে স্কেল স্থাপন করা হবে। যানবাহন মালিক ও চালকদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে সচেতন করার কাজে ম্যাজিস্ট্রেটসহ সড়ক ও জনপথের লোকজন থাকবেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনরায় সংস্কার করে দেবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি সড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা চলছে।’
রাজবাধ এলাকার সাইদুল ইসলাম বলেন, আসলে ওভারলোড কিছুই না। সড়কের কাজ ঠিকমতো করা হয়নি। এ কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কাজের মান ঠিক থাকলে এমন হতো না।
রূপদিয়ার সজিব হোসেন বলেন, মহাসড়কে ওভারলোড নিয়েই গাড়ি চলবে। সে জন্যই ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদাররা ইঞ্জিনিয়ারের কথা শোনেন না। নিজের মনমতো কাজ করেন। ফলে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভোগান্তি হয় মানুষের। কীভাবে পকেট ভারী করা যায় ঠিকাদাররা তা নিয়ে ব্যস্ত। নিম্নমানের কাজ করলে এমন হবেই।
ট্রাকচালক ফারুক হোসেন বলেন, কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তো এমন হয় না। যশোর মহাসড়কে এমন হবে কেন? ব্রেক করলেই সড়কের পিচ উঠে যায়। আমরা তো অন্যান্য মহাসড়কেও গাড়ি ব্রেক করি। সেখানে তো এমন সমস্যা হয় না। ওভারলোডের কারণে এই মহাসড়কে এমন হলে অন্যান্য মহাসড়কে হয় না কেন?
স্থানীয় ভ্যানচালক সামাদ শেখ বলেন, মহাসড়কের কার্পেটিং সরে গিয়ে জমাট বেঁধেছে। চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে। ভ্যান চালানো কঠিন।
মাইক্রোবাসচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, কয়দিন হলো সংস্কার হলো। এরই মধ্যে সড়কের অবস্থা বেহাল। গাড়ি চালানো কঠিন। সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গাড়ি শুধু নাচে।
তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ম্যানেজার মনিরুজ্জামান পাটোয়ারী বলেন, খুলনা-যশোর মহাসড়কের নওয়াপাড়া থেকে বসুন্দিয়া পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার স্থানের কাজ আমরা করছি। এই মহাসড়ক মেরামতের ৩০ টন পর্যন্ত লোড ধারণক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু সড়কে ৬০-৭৫ টন ওজনের ট্রাক চলাচল করে। এগুলো পথে পথে ব্রেক করে। সড়কে প্রচুর যানবাহন থাকায় মালবাহী ট্রাকগুলোকে ঘন ঘন ব্রেক করতে হয়। পাশাপাশি বালুবাহী ট্রাকগুলো থেকে প্রতিনিয়ত সড়কে পানি ঝরতে থাকে। সবকিছু মিলিয়ে মেরামত চলাকালেই সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজের মান নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।
অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্সের প্রকল্প ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান পাটোয়ারী বলেন, খুলনা যশোর মহাসড়কের পদ্মবিলা থেকে যশোর পালবাড়ি পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটারে কাজ আমরা করেছি। এই অংশে তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। যেটুকু সমস্যা ছিল তা সমাধান করে কাজটি সড়ক বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাজে সড়ক বিভাগ সন্তুষ্ট। তবে ওভারলোডজনিত কারণে নোয়াপাড়া থেকে পদ্মবিলা পর্যন্ত অংশে সমস্যা বেশি। তমা কনস্ট্রাকশন সে অংশের সমাধান করার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।