বঙ্গোপসাগরের পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার জেলে সেখানে জড়ো হয়েছেন। সমুদ্র মোহনা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ শেষে তা রোদে শুকিয়ে শুঁটকি প্রক্রিয়া করবেন তারা।
এই মাছ চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, এমনকি বিদেশেও বাজারজাত করা হবে। চরের অভ্যন্তরে ১৩টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে গঠিত দুবলার জেলে পল্লী।
বন কর্মকর্তারা বলছেন, এবার শুঁটকি তৈরিতে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বন বিভাগ। গত মৌসুমে আহরিত হয়েছিল ৪৫ হাজার মেট্রিক টন এবং তা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা। যদিও সে বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন কোটি ২০ লাখ টাকা। দুই লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ায় এ বছর তা লক্ষ্য আদায় ধরে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা আদায় ঠিক করা হয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত ২৬ অক্টোবর শুরু হওয়া শুঁটকি মৌসুম আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে। এই পাঁচ মাস বঙ্গোপসাগর পাড়ের দুবলা, মেহের আলীর, আলোরকোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আম বাড়িয়া, বড় আম বাড়িয়া, মানিক খালী, কবর খালী, চাপড়া খালী, কোকিলমনি ও হলদা খালীর চরে জেলেরা শুঁটকি প্রক্রিয়া করবেন জেলেরা। এ কারণে তাদের বন বিভাগ থেকে পাশ পারমিট দেওয়া হয়েছে। যদিও জেলেরা নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগেই সেখোনে চলে গেছেন।
পূর্ব সুন্দরবনের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা সত্যজিৎ জানান, এবার মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ সুন্দরবন উপকূলের কয়েক হাজার জেলে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য সাগরপাড়ে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলবেন। এ জন্য ৯৮৫টি ঘর এবং ৬৬টি ডিপো তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব ঘর বা ডিপোতে ওঠা প্রতি কুইন্টাল রূপচাঁদা ও লইট্টা মাছের শুঁটকি থেকে ১৫০০ টাকা এবং অন্য সাধারণ মাছের শুঁটকি মাছ থেকে প্রতি কুইন্টাল ৫০০ টাকা রেভিনিউ (রাজস্ব) আদায় করা হবে। এ ছাড়া জেলেদের ঘর ও ডিপো প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা রাজস্ব আদায় করা হবে বলেও জানান তিনি।
জেলে শহিদ মল্লিক, বোরহান উদ্দিন ও বেল্লাল হোসেন বলেন, সমুদের লোনা পানি থেকে লইট্টা, ছুরি, খলিসা, ভেদা, চিংড়ি, ইছা ও রূপচাঁদা মাছ আহরণ করেন। এরপর টানা তিন থেকে চার দিন সেই মাছ রোদে শুকিয়ে প্রায় একশ’ প্রজতির শুঁটকি তৈরি করেন তারা। আগামী পাঁচ মাস সেখানে অবস্থানের অনুমতি মিলেছে। এই সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় রসদসহ যাবতীয় সবকিছু সঙ্গে নিয়ে দুবলার চরে এসেছেন প্রায় ১৫ হাজার জেলে।