৬২ নদী-খাল পুনর্খনন হলে বদলে যাবে খুলনা

খুলনার ১২টি নদী-খালের ৪২ কিলোমিটার পুনর্খনন প্রকল্প শেষ হচ্ছে ডিসেম্বরে। এ প্রকল্পে এখনও বকুলতলা খালের সাড়ে চার কিলোমিটার খনন কাজ চলছে। বাকি ১১টির খনন শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই সব এলাকার কৃষক সেচ সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। মুক্তি পেয়েছেন জলাবদ্ধতা থেকেও। আরও ৬২টি নদী ও খালের ১৭১ কিলোমিটার পুনর্খননের প্রস্তাব দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, যা সম্পন্ন হলে খুলনার অর্থনীতিতে আসবে বড় ধরনের জোয়ার।

জানা গেছে, ছোট নদী-খাল জলাশয় পুনর্খনন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে খুলনার ১২টি নদী-খালের ৪২ কিলোমিটার এলাকা পুনর্খননের জন্য ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ইতোমধ্যে ১১টি নদী-খালের ৩৭.৫ কিলোমিটার পুনর্খনন শেষ হয়েছে। পশ্চিম শালতা নদীর ১৩ কিলোমিটার, সাগরিয়া খালের তিন কিলোমিটার, খানাপাড়া খালের চার কিলোমিটার, বদরদী খালের দুই দশমিক দুই কিলোমিটার, কামিনীবাসী খাল, দেলুটি খাল, ডিহিদড়া খাল, দারুল মল্লিক খাল, নালুয়া নদীর দুই প্রান্ত ও তেঁতুল তলা খালের মোট ১৫.৪৪ কিলোমিটার খনন হয়েছে। এ ছাড়া আঠারোবেকি নদীর ভুতিয়ার বিল হয়ে চিত্রা নদী পর্যন্ত ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দে ৪৯ কিলোমিটার পুনর্খননও সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬২টি নদী ও খালের ১৭১ কিলোমিটার পুনর্খননে বরাদ্দ প্রয়োজন ৮৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এ ছাড়া ২৩১ নম্বর পোল্ডার এলাকার শিবসা নদীর ১০.৫ কিলোমিটার এলাকা, ঝপঝপিয়া নদীর ৭.৫ কিলোমিটার ও পাশের চর এলাকার দুই কিলোমিটার পুনর্খনন ও ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ২২৫ কোটি টাকার প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। পাশাপাশি ড্রেজিংসহ প্রতিরক্ষার আওতায় রয়েছে ২৩ কোটি টাকার মরা ভদ্রা নদীর তিন কিলোমিটার, ৪৩ কোটি টাকার হামকুমড়া নদীর ১৪ কিলোমিটার পুনর্খনন কাজের প্রস্তাব।

এদিকে, খুলনার ডুমুরিয়ায় ভদ্রা ও শালতা নদী ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্খননের দুই বছরেই ভরাট হয়ে গেছে। দেড় দশক আগেও ভদ্রা-শালতা নদীকে ঘিরে মানুষের জীবিকা চলতো। জোয়ার-ভাটা, মাছ শিকার ও নৌযান চলতো ছিল নিয়মিত। কিন্তু ধীরে ধীরে ভদ্রা ও শালতার প্রায় ৩০ কিলোমিটার জুড়ে পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে যায়। এতে এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথও বন্ধ হয়ে যায়। সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। তলিয়ে যায় কৃষি জমি, বসতবাড়ি।

২০০৫ সালে নদী দুটি খননের উদ্যোগ নেয় খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে নানা জটিলতায় প্রকল্পটি ঝুলে যায়। পরে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে একনেক বৈঠকে ৪৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই বছরই কাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালে শেষ হয়। খননের কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন অ্যান্ড কোং, হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স, কেএসএল জেভি, রানা বিল্ডার্স, সালেহ আহমেদ ও কামরুল এন্টারপ্রাইজ।

প্রতিষ্ঠানগুলো ভদ্রার দক্ষিণাংশে ডুমুরিয়ার দিঘলিয়া থেকে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং উত্তরাংশের তেলিগাতি থেকে ডুমুরিয়া বাজার পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার খনন করে। এ ছাড়া শালতার ডুমুরিয়া বাজারের ভদ্রা থেকে শুরু করে ৯ কিলোমিটার খনন করে শৈলমারি নদীতে সংযুক্ত করা হয়।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘পরিকল্পনা নিয়ে নদী পুনর্খননের কাজ করা হচ্ছে। মরা ভদ্রা খননের দুই বছরেও সফলতা না আসার কারণ, স্থানীয়ভাবে নদীর মাঝ দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে রাস্তা করা হয়েছে। এতে বাঁধের বিপরীত পাশ দ্রুত ভরাট হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘৬৪ জেলার ছোট নদী-খাল, জলাশয় পুনর্খনন প্রকল্পের প্রথম ফেজের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ওই সব এলাকায় সেচ কার্যক্রম সচল হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আরও ৬২টি নদী ও খাল পুনর্খনন সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের কৃষি-অর্থনীতির চেহারাই বদলে যাবে।’

খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নদী-খাল রক্ষায় ১৪শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ কাজ চলছে। এখন সিটি করপোরেশনের বাইরের নদী-খাল রক্ষায় আলাদা প্রকল্প প্রয়োজন। যা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করবে।’