শিক্ষকের মৃত্যু

বহিষ্কৃত ৯ শিক্ষার্থীর সাত জনই ছাত্রলীগ নেতা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বহিষ্কৃত নয় শিক্ষার্থীর সাত জনই ​শাখা ছাত্রলীগের নেতা। এর মধ্যে সাত জন সম্পাদক ও দুই জন সদস্য পদে রয়েছেন।

ছাত্র শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। শনিবার (০৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও তথ্য শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়।

বহিষ্কৃতরা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কুয়েট ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান।

বহিষ্কৃতরা হলেন কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান নাহিয়ান সেজান, সহ-সভাপতি ও সিই বিভাগের শিক্ষার্থী তাহামিদুল হক ইশরাক, কৃষিশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও এলই বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও একই বিভাগের শিক্ষার্থী আ স ম রাগিব আহসান মুন্না, উপ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ও সিই বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও এমই বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান, উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক এমএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাইমুর রহমান অন্তু, সদস্য ও সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রিয়াজ খান নিলয় এবং সদস্য এমই বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ রিফাত।

কুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নিবিড় রেজা বলেন, তাদের নয় জনকে সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি জানতে পেরেছি। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিচারের দাবিতে মাঠে নামবে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার বিষয়টি ২ ও ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৭৬তম জরুরি সভায় উত্থাপন করা হয়। সেখানে সিসিটিভির ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য পর্যালোচনা করে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে নয় শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। 

গত ৩০ নভেম্বর দুপুরে অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যু হয়। শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতনে ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

এদিকে, অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে দোষীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ চার দফা দাবিতে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছে শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।

এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭৬তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় শুক্রবার এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে অপরাধীদের শনাক্ত ও সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ রিপোর্ট তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর দাখিল করতে বলা হয়। 

একই ঘটনায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৪টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিমের মৃত্যু নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে ৭৬তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।