৬ বছর পর রহস্য উদঘাটন, মায়ের প্রেমের বলি হলো সন্তান

ছয় বছর পর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের প্রবাসী তোয়াজ উদ্দিনের ছেলে শিহাব হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মায়ের প্রেমের বলি হয়েছে আট বছর বয়সী শিহাব।

রবিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহ পিবিআই পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। ব্রিফিংয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক সরদার বাবর আলী ও পরিদর্শক আমির আব্বাস উপস্থিত ছিলেন।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের প্রবাসী তোয়াজ উদ্দিনের ছেলে শিহাব নিখোঁজ হয়। এর দুদিন পর ৩০ অক্টোবর লাশ পাওয়া যায় পাশের শিবপুর গ্রামের ওসমান আলীর জমিতে। এ ঘটনায় নিহতের মা বিলকিস খাতুন তার প্রেমিক জমির উদ্দিন পিন্টুর ইন্ধনে ছয় জনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে চুয়াডাঙ্গা ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করে হত্যার প্রধান আসামি লাল্টুকে বাদ দিয়ে আদালতে নিহতের চাচাতো ভগ্নিপতি আরেক ঘাতক পিন্টুকে আসামি করে ত্রুটিপূর্ণ ও দায়সারা চার্জশিট জমা দেয়। তবে পরকীয়া প্রেমিককে রক্ষা করতে বাদী বিলকিস চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন। আর এতেই কপাল পোড়ে পিন্টুসহ অন্য আসামিদের। চুয়াডাঙ্গার একটি আদালত মামলাটি নতুনভাবে তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ পিবিআই-কে নির্দেশ দেন। ঝিনাইদহ পিবিআইর এসআই তহিদুল ইসলাম মামলাটির তদন্তভার নিয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটনে প্রধান আসামি লাল্টু ও তার সহায়তাকারীদের গ্রেফতার করেন। দায় স্বীকার করে আসামি লাল্টু ও নয়ন আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন শিহাব বাড়ির পাশে ইমরানের দোকানে মিষ্টি কিনতে যায়। ফেরার পথে কিশোর আসামি নয়ন শিহাবকে তার চাচাতো ভগ্নিপতি ও মায়ের প্রেমিক জমির উদ্দিন পিন্টুর কাছে নিয়ে যায়। সাবেক চরমপন্থি ক্যাডার পিন্টু নয়নকে ৫০০ টাকা দিয়ে শিহাবের বিষয়ে কাউকে কিছু না জানাতে শাসিয়ে দেন। পিন্টুর ঘরে শিহাবকে আটকে রেখে চক্রটি গ্রামে নিখোঁজের মাইকিং করে। কুতুবপুর গ্রামের শ্রী অসিত কুমারের ভ্যানযোগে কলম ও শাহাবুদ্দীন এই প্রচার কাজে অংশ নেন। পরিকল্পনা মাফিক রাতে আসামি লাল্টু শিহাবের মালয়েশিয়া প্রবাসী পিতা তোয়াজ উদ্দীনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করার পরিকল্পনা নেন। এসব দেখে শিহাব কান্নাকাটি শুরু করলে লাল্টু শিহাবের কানে জোরে থাপ্পড় মারেন। এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। চাচাতো ভগ্নিপতি পিন্টুর ঘরে শিহাবকে শ্বাসরোধে হত্যার পর অসিতের পাখিভ্যানযোগে লাশ শিবপুর গ্রামের মাঠে ফেলে আসে। লাশ টানার কাজে ব্যবহৃত পাখিভ্যানটিও পিবিআই উদ্ধার করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর এসআই তহিদুল ইসলাম জানান, মূলত মায়ের সঙ্গে পিন্টুর অনৈতিক কাজ দেখে ফেলা ও পরবর্তী সময়ে শিহাবের প্রবাসী বাবার কাছে মুক্তিপণ আদায় করার জন্যই অপহরণ ও হত্যা করে। এই মামলার মূল আসামি লাল্টুকে বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। পিবিআইর তদন্তে এজাহারের বাইরে আরও তিন আসামির সন্ধান মেলে।

এসআই তহিদুল জানান, মামলাটির তদন্তভার গ্রহণের পর প্রধান আসামি শিবপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে লাল্টুকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার সমোশপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কুতুবপুর গ্রাম থেকে জিয়ারত আলীর ছেলে জমির উদ্দিন পিন্টু ও মথুর দাসের ছেলে অসিত দাসকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় ছয় বছর পর শিশু শিহাব হত্যার প্রকৃত ঘাতকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারা ঝিনাইদহ পিবিআইর আরেকটি সাফল্য বলে তিনি দাবি করেন।