আপস করেননি বলেই বঙ্গবন্ধুকে জেলে যেতে হয়েছে: কাজী নাবিল

যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের অধিকার আদায়ের জন্যে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তান আমলে বহু বাঙালি রাজনীতিক দেশের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন; বঙ্গবন্ধুরও অনেক প্রস্তাব ছিল। কিন্তু তিনি কখনও আপস করেননি বলেই তাকে জেলে যেতে হয়েছে।’ রবিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মিলন সভায়’ বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই মিলন সভার আয়োজন করেন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন।  

মিলন সভায় প্রধান বক্তা কাজী নাবিল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ঈর্ষান্বিত হয়ে ফের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত দেশে ও দেশের বাইরে এই ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তারা বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তান বানাতে কুচক্রে মেতেছে। লন্ডনে বসে তারেক রহমান আর দেশে বিএনপি নেতারা ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড করছেন। তারা আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রকে বিভিন্ন ভুল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেশবিরোধী চক্রান্ত করছে। সরকারের সাফল্যে দিশেহারা হয়ে একের পর এক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে দেশের শাসনক্ষমতা গ্রহণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।’ 

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান আখ্যা দিয়ে এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আপনাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। গত ১৩ বছরে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। সারাদেশে একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশের জিডিপি বেড়েছে। উন্নয়নের ধারা এভাবে চললে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে ২৫তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আগামী প্রজন্মকে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ উপহার দিতে আপনারা (মুক্তিযোদ্ধারা) অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন। আপনাদের কথা দেশের সাধারণ মানুষ শোনে, বিশ্বাসও করে। আপনাদের কণ্ঠ জোরালো করতে হবে।’ 

মিলন সভায় অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারাকাজী নাবিল স্বাধীনতার পর থেকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ পুনরুদ্ধারে যখন ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময় পরাজিত শত্রুরা তাকে সপরিবারে হত্যা করে। এরপর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সরকার দেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর কাজ করে। ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে দেশে বিএনপি-জামায়াত আবারও নৈরাজ্য শুরু করে। তাদের সময় বাংলা ভাইয়ের ত্রাস, সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে দেশকে একটি নারকীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়।’ 

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য আপনাদের কারণে আমরা মাত্র নয় মাসের লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ পেয়েছি। সেই সোনার দেশকে কোনও অপশক্তি যেন পাকিস্তান বা আফগানিস্তান বানাতে না পারে সে বিষয়ে আপনাদের কণ্ঠ সোচ্চার করতে হবে। আজ আপনাদের সম্মাননা জানাতে পেরে আমি নিজেই সম্মানিত বোধ করছি। আপনারা আপনাদের যুদ্ধকালীন স্মৃতিকথা দয়া করে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা নিন। তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেখান থেকে প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে।’

মিলন সভায় বক্তৃতাকালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী ও আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার অঙ্গীকার করেন।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন– প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালীন বিএলএফ প্রধান আলী হোসেন মনি, জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, যশোর পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণী খান পলাশ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এএইচএম মুজহারুল ইসলাম মন্টু, যশোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান মিন্টু, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন দোদুল প্রমুখ।  

অনুষ্ঠানের শুরুতে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়া হয়।