পুলিশের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বাসহ ৭ জনকে মারধরের অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারী একই পরিবারের সাত জনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) রাতে সদর উপজেলার কুন্দিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন—কুন্দিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের স্ত্রী জমেলা খাতুন (৬৫), তার তিন ছেলে ইসরাফিল হোসেন (৩৪), হোসেন আলী (৪০) ও মুসা করিম (৩০), ইসরাফিলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জাকিয়া খাতুন (২২), মুসা করিমের স্ত্রী সাবিনা খাতুন (২৬) ও হোসেনের স্ত্রী শিউলি খাতুন (২২)।

পুলিশ জানায়, ঈদে গরুর মাংসের জন্য করা সমিতির টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার কুন্দিপুর গ্রামের হোসেন আলীর সঙ্গে মোস্তফার হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় হোসেন আলীর বিরুদ্ধে দর্শনা থানায় একটি অভিযোগ করেন মোস্তফা। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় স্থানীয় হিজলগাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মজিবর রহমান অভিযোগের তদন্ত করতে কুন্দিপুর গ্রামে যান। পুলিশ দেখে অভিযুক্ত হোসেন আলী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বাড়ির টিনের চালে তার কপাল কেটে যায়। রক্ত বের হতে দেখলে পুলিশের ওপর চড়াও হয় তার পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসী। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সেখান থেকে ফিরে আসে পুলিশ।

আহত হোসেন আলীর মা জমেলা খাতুন বলেন, ‘রাতে হিজলগাড়ী ক্যাম্পের দুই পুলিশ সদস্য গ্রামে আসলে আমার ছেলে ভয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাকে ধাওয়া করে ধরে বেধড়ক মারধর করে। এতে তার কপাল কেটে রক্ত বের হলে অজ্ঞান হয়ে যায়। খবর পেয়ে হোসেনের স্ত্রীসহ আমরা ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশ চলে যায়। পরে দর্শনা থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আসলে আমরা প্রতিবাদ করি। এতে পুলিশ সদস্যরা আমাকে গুলি করারও হুমকি দেয়। তারা আমাকেসহ তিন ছেলে ও তিন পুত্রবধূকে বেধড়ক মারধর করে।’

আহত জাকিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমার স্বামীকে খুঁজতে ঘরে আসে পুলিশ। ঘরের মধ্যে তাকে ধরে গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। সামনে গেলে বন্দুকের বাট দিয়ে আমার পায়ে আঘাত করে এবং ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন পুলিশ সদস্যরা। সেখানে কোনও নারী পুলিশ ছিল না। আমরা এর বিচার চাই।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসনাত পারভেজ শুভ বলেন, ‘আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে হোসেন আলী মাথা ও চোখে আঘাত পেয়েছেন। তাকে ভর্তি রেখে অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর বলেন, ‘একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েছিলেন হিজলগাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে অভিযুক্ত পালানোর সময় কপাল কেটে গেলে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের হাতাহাতি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দর্শনা থানা পুলিশ। তবে কাউকে মারধর করা হয়নি।’

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে আজ দর্শনা থানায় বসা হবে। উভয়পক্ষের কথা শোনা হবে। অপরাধ প্রমাণ হলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।