ঈদের কেনাকাটা করতে ভারত যাতায়াত বেড়েছে কয়েক গুণ

ঈদের কেনাকাটা করতে ভারত যাতায়াত কয়েক গুণ বেড়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীদের। করোনা সংক্রমণের দুই বছর পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে গত সাত দিনে সর্বোচ্চ পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করেছেন। তবে দেশে ফেরার পথে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন পাসপোর্টযাত্রীরা।

গত ২৪ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল এক সপ্তাহে বেনাপোল দিয়ে ২২ হাজার ৪৯৬ পাসপোর্টযাত্রী ভারতে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ১৫ হাজার ২৯৯ আর ভারত থেকে ফিরেছেন সাত হাজার ১৯৭ জন। সাত দিনের মধ্যে ২৯ এপ্রিল সব থেকে বেশি অর্থাৎ তিন হাজার ১৭৮ পাসপোর্টযাত্রী ভারতে গেছেন। যা আগের সপ্তাহ থেকে দ্বিগুণ।

বেনাপোলসহ আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ কেনাকাটায় হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে ভারতে। দেশের ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত উঠেছে। ভারতের ভিসা ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক সহজলভ্য হওয়ায় ঈদে কেনাকাটা করতে ভারতে যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। সেখান থেকে পরিবারের জন্য জিনিসপত্র কিনে ফিরে আসছেন।

কাপড় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদে বাংলাদেশি ক্রেতা ধরতে কলকাতায় গড়ে উঠেছে নতুন নতুন বাজার। কলকাতার নিউমার্কেট, বড় বাজার মীর্জা গালিব স্ট্রিট, বেলগাছিয়া, চিৎপুর, টালিগঞ্জ পার্ক সার্কাস, এন্টালি, আনোয়ার শাহ রোড, মল্লিকবাজার, রাজাবাজার, ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদ চত্বর, মেটিয়ানুরুজ, খিদিরপুর, পাক স্ট্রিট, জাকারিয়া স্ট্রিট, বড় বাজার এলাকায় ইতোমধ্যে ঈদের জমজমাট কেনাকাটা চলছে।

এসব এলাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এর বাইরে বিভিন্ন শপিংমলে ঈদ উপলক্ষে কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর বিশেষ ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে মালামাল কিনে পাসপোর্টযাত্রীরা দেশে ফিরছেন। প্রত্যেকে যদি সর্বনিম্ন এক হাজার ডলারের (বাংলাদেশি টাকায় ৮৬ হাজার টাকা) পণ্য কেনাকাটা করেন তাহলে দেশ থেকে এবারের ঈদে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি চলে যাবে। অনেকে ভারতে গিয়ে দুই হাজার ডলার থেকে পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত কেনাকাটা করছেন। এই হিসেবে দেশ থেকে অর্থ চলে যাওয়ার পরিমাণ আরও বেশি।

ভারত থেকে কেনাকাটা শেষে দেশে ফেরা বেনাপোলের রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি। এজন্য পরিবারের সবার জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে কলকাতায় গিয়েছিলাম। অল্প দামে সবার কেনাকাটা শেষ করে আজ ফিরছি।’

যশোরের আমজাদ হোসেন বলেন, ‘যে শাড়ি ও থ্রিপিসের দাম এখানে ১০ হাজার টাকা তা কলকাতা থেকে কিনেছি চার হাজার টাকায়। পণ্যের মানও ভালো। এখানে সবকিছুর দাম দ্বিগুণ।’

অন্নপূর্ণা বলেন, ‘আমি এক বছরের মাল্টিপল ভিসা পেয়েছি। গত বৃহস্পতিবার বিকালে কলকাতা পৌঁছে কিছু কেনাকাটা করেছি। শুক্রবার ও শনিবার কেনাকাটা সেরে রবিবার সকালে ফিরে এলাম। তবে এটা সত্য, আমাদের দেশের বাজারের তুলনায় অনেক কম মূল্যে কেনাকাটা করা যায় কলকাতায়। বলতে গেলে অর্ধেক দামে কেনা যায়।’

ভারতফেরত যাত্রীরা বলছেন, ই-টোকেন কিংবা ভিসা ব্যবস্থাপনা ভারত সরকার আগের তুলনায় সহজলভ্য করলেও সীমান্তের ওপারে রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। সেই সঙ্গে পেট্রাপোল চেকপোস্টে রয়েছে ভারতীয় ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও বিএসএফের চরম দুর্ব্যবহার। ভারত ঘুরে আসা অনেক বাংলাদেশি দুর্ব্যবহার আর অব্যবস্থাপনার শিকার হন প্রতিদিন।

ভারতফেরত বরিশালের ধীমান সরকার বলেন, ‘ভারতীয় কাস্টমস এবং বিএসএফ আমাদের মানুষ বলে মনে করে কিনা সন্দেহ আছে। আসার সময় নোম্যান্সল্যান্ডে প্রতিটি ব্যাগ খুলে তল্লাশি করেছে। তাদের আচরণ খুবই খারাপ।’

যশোরের আশরাফ আলী বলেন, ‘কেউ প্রতিবাদ করলে কিংবা কিছু জানতে চাইলে পাসপোর্ট আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেওয়া হয়। বয়স্ক মানুষও এই থেকে রেহাই পান না। অহেতুক হয়রানি করে বিএসএফ।’

ভারতফেরত যাত্রীদের অভিযোগ, ভারতে যাওয়া এবং কেনাকাটায় হাজার কোটি টাকা আয় করছে দেশটি। অথচ এদেশের মানুষের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করছে। সেখানে দালাল চক্র অনেক যাত্রীর কাছ থেকে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করে ঘুষ আদায় করছে। এসবের কোনও প্রতিকার নেই।

খুলনার আতিয়ার রহমান বলেন, ‘বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস থেকে বের হওয়ার পর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে বিজিবি সদস্যরা আমার প্রতিটি ব্যাগ খুলে চেক করেছে। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিজিবি সদস্যরা আরও একবার চেক করেছে। তারপর কাস্টমস চেক করেছে। একই জায়গায় তিন বার চেক করে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।’

বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি মোহাম্মদ রাজু আহম্মেদ বলেন, দুই বছর পর চলতি মাসে বেনাপোল দিয়ে ভারতে পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত বেড়েছে কয়েক গুণ। বেশিরভাগই ঈদের শপিং করে ফিরছেন। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে ভারতীয় হাইকমিশন ট্যুরিস্ট ভিসা চালু করায় আড়াই হাজার পাসপোর্টযাত্রী প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করছেন। সাধারণত ঈদের ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভারতে ভ্রমণে যাওয়ার আগ্রহ থাকে। এজন্য ওই সময়ে চেকপোস্টে বাড়তি চাপ থাকে। হয়রানি ছাড়াই যাত্রীরা যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।