‘কালা পাহাড়ের’ দাম ৩০ লাখ টাকা

প্রায় তিন বছর ধরে আদর-যত্নে গরুটিকে লালন-পালন করছেন। নাম দিয়েছেন ‘কালা পাহাড়’। এই সময়ে গরুটির ওজন হয়েছে দুই হাজার ২০০ কেজি (৫৫ মণ)। কালা পাহাড়কে আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুত করেছেন মালিক। দাম হাঁকছেন ৩০ লাখ টাকা।

গরুটির মালিকের নাম সৌমিক আহমেদ সাগর। তিনি যশোর সদরের মাহিদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় হোমিও মেডিক্যাল কলেজের প্রভাষক। পাশাপাশি ডাক্তারিও করেন। শখের বশেই গরুটি পালন করেছেন।

ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুটি বছর তিনেক আগে যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকা থেকে ৬৫ হাজার টাকায় কেনেন। তখন সেটি বাছুর ছিল। এই তিন বছরে সন্তানের মতো আদর যত্নে বড় করেছেন গরুটিকে। অনেক বড় গরু হওয়ায় দেখতে প্রায় প্রতিদিনই লোকজন আসছেন। দর্শনার্থীরা জানতে চান, দাম কতো উঠেছে।

মালিক সৌমিক আহমেদ সাগর বলেন, ‘বাছুরটি কিনে আনার পরপরই নাম রাখি, কালা পাহাড়। চলতি বছরের ১৪ মে যশোরে পশু প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল যশোর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর। সেখানে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন প্রাণী আনা হয়েছিল। আমার কালা পাহাড় সেখানে প্রথম হয়; যার ফলে আমাকে একটি ক্রেস্ট ও একটি সনদ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, সেদিন কালা পাহাড়ের ওজন মাপা হলে পাওয়া যায়। মাপে ওজন হয়েছে ২২০০ কেজি তথা ৫৫ মণ। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ খামারিরা এক বাক্যে স্বীকার করেন, এটিই খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় গরু।

প্রায় তিন বছর ধরে আদর-যত্নে গরুটিকে লালন-পালন করছেন। নাম দিয়েছেন ‘কালা পাহাড়’

কালা পাহাড়ের খাদ্য তালিকায় রয়েছে- প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭ কেজি পালিশ (পালিশ হলো- ধান, চাল, গম, ছোলা, কেওড়া, খেসারি, মসুর ডাল, সয়াবিন, সরিষা, তুলাবীজ, নারিকেলের খৈল, কালিজিরাসহ ১৪ রকম খাবার), খড়-কুড়ো ইত্যাদি। কোনও ধরনের ওষুধ বা ক্ষতিকর কিছু খাওয়ানো হয় না।

গরুর পেট খারাপ হলে নিজেই চিকিৎসা দেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শোলা কচু ও চাল সেদ্ধ করে লবণ দিয়ে তরল তৈরি করে খেতে দেই। এতে পেট ফাঁপা অর্থাৎ গ্যাস সেরে যায়। এই জাতীয় গরু বেশ সৌখিন। তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। নিয়মিত গোসল করানো লাগে। এ ছাড়া গরম যাতে না লাগে সে কারণে সার্বক্ষণিক ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগে প্রতিদিন এক হাজার ৫০ টাকার খাবার লাগলেও গত কয়েকমাস ধরে প্রায় এক হাজার ৪৫০ টাকা লাগছে।’

মালিক সাগর বলেন, ‘কোরবানি ঈদের জন্য প্রস্তুত করা কালা পাহাড়কে দেখতে প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন। ইতিমধ্যে কয়েকজন চাকরিজীবী যৌথভাবে এটি কেনার জন্য দেখে গেছেন। তারা সাড়ে ১০লাখ টাকা দাম বলে গেছেন। কিন্তু আশা করছি, কাঙ্ক্ষিত দামেই কালা পাহাড়কে বিক্রি করতে পারবো।’

গরুটির মালিকের নাম সৌমিক আহমেদ সাগর। তিনি যশোর সদরের মাহিদিয়া গ্রামের বাসিন্দা

শুধু কালা পাহাড় নয়, তার গোয়ালে আরও একটি একই জাতের গরু রয়েছে। সেটি তিনি মাস ছয়েক আগে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। ওই গরুটির নাম দিয়েছেন ‘বিগ বস’। সেটির উচ্চতা কালা পাহাড়ের চেয়ে প্রায় তিন ইঞ্চি বেশি, ছয় ফিট। লম্বায় ১০ ফুটের বেশি। এটার ওজন এক হাজার ৭০০ কেজির মতো। এটির দাম হাঁকছেন ২৫ লাখ টাকা।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘সাগর ভাইয়ের এই বিশাল সাইজের গরুটি দেখতে অন্যদের মতো আমিও যাই। গৃহপালিত পশুর মধ্যে এত বড় গরু এর আগে দেখিনি। আশা করছি, আল্লাহ সাগর ভাইয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবেন।’

মাহিদিয়া মহিলা ডিগ্রি মাদ্রাসার শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বহু জায়গায় বহু গরু দেখেছি। কিন্তু এত বড় গরু দেখিনি আগে; পাহাড়ের মতো বলা যায়।’

জানতে চাইলে যশোর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউল আলম বলেন, ‌‘খুলনা বিভাগে সাগরের গরু কালা পাহাড় সবচেয়ে বড় কিনা আমরা যাচাই-বাছাই করিনি। তাছাড়া প্রদর্শনীতেও আমরা সেটির ওজন করিনি। তবে, তিনি শিক্ষক মানুষ। প্রদর্শনীতে আনার সময় আমাদের কর্মীদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল। ওই সময় তিনি গরুটির ওজন করেছিলেন। আমার মনে হয়, তার দাবি সঠিক।’