‘আগামী নির্বাচনে যশোরের ৬টি আসনে নৌকাকে জয়যুক্ত করতে হবে’

যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের সবার কাজ হচ্ছে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে এক করে আগামী নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসনে নৌকাকে জয়যুক্ত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও বাংলাদেশের দায়িত্বে আনতে হবে। দেশের ও যশোরের উন্নয়নের স্বার্থে আপনারা একত্রিত হয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। ইনশাআল্লাহ শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও নৌকার জয় হবে।’

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিকাল ৫টায় যশোর শহরের কাঁঠালতলা মোড়ে জাতীয় শোক দিবসের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত আলোচনা ও খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একমাত্র নেতা, যিনি কখনও বাঙালির অধিকার প্রশ্নে আপস করেননি। বাঙালির অধিকারের জন্য তিনি যেকোনও পদ উপেক্ষা করতে পারতেন। তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকেছেন। একইসঙ্গে তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলেন। এই ৫০-৬০-এর দশকে তিনি ১৪টি বছর কারাগারে কাটিয়েছেন বাঙালির অধিকারের জন্য। ৭০-এর নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে আপস করেননি বলেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ফিরিয়ে দেন। এরপর তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। তার ডাকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মাধ্যমে আমরা একটি লাল-সবুজ পতাকা ও দেশ পাই।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে পুনর্গঠন করছিলেন তখন যারা দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি তারা ও তাদের বিদেশি প্রভুরা মিলে চক্রান্ত শুরু করে। তারা একের পর এক কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। বঙ্গবন্ধু যখন সবকিছু মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করাচ্ছিলেন, তখন ৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। সেদিন বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তানে পরিণত করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশের চরিত্র পরিবর্তন করে ফেলা হয়। একের পর এক সামরিক জান্তা, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সময় বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তানে পরিণত করা হয়। আমরা দেখতে পাই, তখন রেডিওতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের কথা নির্বাসিত করা হয়। পাকিস্তান যে আমাদের শত্রু ছিল এই কথাও রেডিওতে বলা হতো না। বাংলাদেশকে একটি নতুন পাকিস্তানে পরিণত করা হয়। ভাগ্যক্রমে বিদেশে থাকার কারণে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান।’

এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার নিয়ে আসেন। তিনি ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সফলতা দেখান। তবে আবারও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের হাত ধরে তাকে ২০০১ সালের নির্বাচনে হারিয়ে দেওয়া হয়। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করে। বিভিন্ন ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এক হয়। তারা তখন স্লোগান দিতো বাংলা হবে আফগান আমরা হবো তালেবান। তারা ২০০৫ সালের আগস্টে একসঙ্গে ৫০০টি সিরিজ বোমা হামলা চালায় সারা দেশে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। একের পর এক তখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসেন। এরপর বাংলাদেশ সারা পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আমরা দেখতে পাই, সব সামাজিক সূচকে আমরা এগিয়ে চলেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের গড় আয়ু আগের চেয়ে বেড়েছে।’

নাবিল আহমেদ আরও বলেন, ‘গত দুবছর ধরে সারা বিশ্বে আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনা মহামারি ভাইরাস। এই মহামারিতে বিপর্যস্ত হয়েছে চায়না, ইতালির মতো দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করতে পেরেছে। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ কোভিড মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। সারা দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৭০ ভাগকে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে জ্বালানি তেল ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। আপনাদের অনেকের কষ্ট হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা উপলব্ধি করেন।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন যশোর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন। বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল। উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের অর্থ সম্পাদক ফিরোজ আলম, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিবুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান মিন্টু, উপ-প্রচার সম্পাদক লুৎফুল কবীর বিজু, যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদি হাসান, যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ রফিকুল ইসলাম।