‘ঐক্যবদ্ধ হোন, শেখ হাসিনাকে আবারও বিজয়ী করতে হবে’

যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ‘দেশে যত উন্নয়ন হয়েছে তার সবই হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। তার নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। বাংলাদেশ মধ্যমআয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। দেশের সব জেলায় স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। কাজেই আমি বলবো, আপনারা আবারও ঐক্যবদ্ধ হোন। শেখ হাসিনাকে আবারও বিজয়ী করতে হবে। তিনি সরকার গঠন করলে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘জনসমর্থন হারিয়ে বিএনপি-জামায়াত আবারও নাশকতা ও সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা করছে তারা। আমার বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারবো, আবারও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে পারবো আমরা।’ 

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে যশোর শহরের গাড়িখানা মোড়ে জাতীয় শোক দিবসের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আলোচনা সভা ও খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনা সভায় অংশ নেন বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মী।

অনুষ্ঠানে দলীয় নেতাকর্মী ও বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নেন

সংসদ সদস্য কাজী নাবিল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের ১৪টি বছর কারাগারে ছিলেন। তিনি ছিলেন একমাত্র নেতা, যিনি কখনও বাঙালির অধিকার প্রশ্নে আপস করেননি। বাঙালির অধিকারের জন্য তিনি যেকোনও পদ উপেক্ষা করতে পারতেন। তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকেছেন। একইসঙ্গে তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলেন। এই ৫০-৬০-এর দশকে তিনি ১৪টি বছর কারাগারে কাটিয়েছেন বাঙালির অধিকারের জন্য। ৭০-এর নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে আপস করেননি বলেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ফিরিয়ে দেন। এরপর তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। তার ডাকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মাধ্যমে আমরা একটি লাল-সবুজ পতাকা ও দেশ পাই।’

তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে পুনর্গঠন করছিলেন তখন যারা দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি তারা ও তাদের বিদেশি প্রভুরা মিলে চক্রান্ত শুরু করে। তারা একের পর এক কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। বঙ্গবন্ধু যখন সবকিছু মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করাচ্ছিলেন, তখন ৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। সেদিন বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তানে পরিণত করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশের চরিত্র পরিবর্তন করে ফেলা হয়। একের পর এক সামরিক জান্তা, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সময় বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তানে পরিণত করা হয়। আমরা দেখতে পাই, তখন রেডিওতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের কথা নির্বাসিত করা হয়। পাকিস্তান যে আমাদের শত্রু ছিল এই কথাও রেডিওতে বলা হতো না। বাংলাদেশকে একটি নতুন পাকিস্তানে পরিণত করা হয়। ভাগ্যক্রমে বিদেশে থাকার কারণে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান।’

কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার নিয়ে আসেন। তিনি ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সফলতা দেখান। তবে আবারও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের হাত ধরে তাকে ২০০১ সালের নির্বাচনে হারিয়ে দেওয়া হয়। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করে। বিভিন্ন ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এক হয়। তারা তখন স্লোগান দিতো বাংলা হবে আফগান আমরা হবো তালেবান। তারা ২০০৫ সালের আগস্টে একসঙ্গে ৫০০টি সিরিজ বোমা হামলা চালায় সারা দেশে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। একের পর এক তখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতে থাকে।’

আলোচনা সভায় অংশ নেন বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মী

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসেন। এরপর বাংলাদেশ সারা পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আমরা দেখতে পাই, সব সামাজিক সূচকে আমরা এগিয়ে চলেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের গড় আয়ু আগের চেয়ে বেড়েছে। আমরা দেখেছি, উন্নয়ন হতে পারে কেবল শেখ হাসিনার হাতে। কাজেই তার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।’

যশোর পৌর আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান কবীর শিপলুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান মিন্টু, উপ-প্রচার সম্পাদক লুৎফুল কবীর বিজু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদি হাসান, পৌর কাউন্সিলর রাজিবুল আলম, হাফিজুর রহমান ও রবি সিদ্দিকী প্রমুখ।