ফাইয়াজের ফেসবুক পোস্ট

‘আবরার ভাইয়ের জন্য এখনও কাঁদেন মা’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ (৭ অক্টোবর) শুক্রবার । ২০১৯ সালের এই দিনে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যু হয়। ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনায় আবরারের বাবা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদকে হত্যার দায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। আবরার ফাহাদের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডে।

আরও পড়ুন: আবরার হত্যায় ২৫ আসামির কার কী দায়

এদিকে আবরার ফাহাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে ভাইকে স্মরণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন ছোটভাই আবরার ফাইয়াজ।

ফেসবুক পোস্টে ফাইয়াজ উল্লেখ করেন-

‘আজ ৭ অক্টোবর, ২০২২। ভাইয়াকে মেরে ফেলার তিন বছর পূর্ণ হলো। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সকাল ১০টার বাসে ভাইয়া কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় যায়। বিকাল ৫টার দিকে পৌঁছানোর পরে ভাইয়া একটু ঘুমাতে যায়। রাত ৮টায় ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে যায় তারই কিছু বন্ধু। রাত ১০টা পর্যন্ত নানা প্রশ্ন করার পরেই শুরু হয় পালা করে পেটানো। এরপর রাত ২-৩টার দিকে সে মারা যায়। তিন বছর অনেক লম্বা সময়। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর রায়ও হয়েছে। আসামিরা আপিলও করেছে। তবে গত ১০ মাসে আর কোনও অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হয়নি। কিন্তু আমাদের আশা অন্য সব বিচারের মতো ভাইয়ার হত্যার বিচারের জন্য যেন বেশি অপেক্ষা করতে না হয়। 

অক্টোবর এলেই পেছনের সময়ের কথা মনে হয়। গত বছর এই অক্টোবরে দাদিও মারা যান। প্রায় প্রতিটা কথাতেই আম্মু ভাইয়ার কথা মনে করেন। এখনও প্রায়ই কাঁদতে থাকেন। গত ৩ বছরে যত জনের সঙ্গে দেখা হয়েছে, প্রত্যেকের কাছেই ভাইয়ার জন্য দোয়া চেয়েছেন আম্মু। আব্বু-আম্মু দুইজনই বেশ অসুস্থ হয়ে
গেছে। রাতে মাঝে মাঝেই আম্মু বলে ওঠে যে, ‘এই সময়ে আমার ছেলেকে কত মারছিলো, ও কতই না চিৎকার করেছে।’

পোস্টে ফাইয়াজ আরও লেখেন- ‘কিছুদিন পরেই হয়তো আমাদের ক্লাস শুরু হবে। সত্যি বলতে আমি নিজেও জানি না তখন কী পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। যেই স্বপ্নের সৃষ্টি ভাইয়ার হাত ধরে, সেখানে ভাইয়াই নেই এখন। মাঝে মাঝে মনে হয় ভাইয়াকে যদি গত কয়েক বছর কী কী ঘটেছে জানাতে পারতাম, তাহলে ওর অনুভূতিটা কেমন হতো? আমাদের কাছে ভাইয়ার যে শূন্যতা সেটা যেন ক্রমেই বাড়ছে।

তবে এত কিছুর মধ্যে ভালোলাগার জায়গা একটাই, তিন বছর হয়ে গেলেও ভাইয়াকে অনেকেই এখনও ভুলেনি। হয়তো আরও বহুদিন মনে রাখবে আর দোয়া করবে।’

প্রসঙ্গত, আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) নথিপত্র গত ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এসে পৌঁছে। পরে ২৫ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনের মধ্যে ১৭ আসামি খালাস চেয়ে হাইকোর্টে জেল আপিল দায়ের করেন। এরআগে, গত ৮ ডিসেম্বর হত্যা মামলার ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহতাসিম ফুয়াদ, সাবেক গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, সাবেক আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আকাশ হোসেন ও মোয়াজ আবু হুরায়রা।

একইসঙ্গে আদালত তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ওরফে শান্ত, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার অপু, সাবেক সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাবেক সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মুস্তবা রাফিদ এবং সদস্য মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, মুনতাসির আল জেমি এবং ইহতাশামুল রাব্বী তানিম।

এছাড়া ছাত্রলীগ কর্মী খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, এএসএম নাজমুস সাদাত, মাজেদুর রহমান ওরফে মাজেদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, শামীম বিল্লাহ, মুহাম্মদ মোরশেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, মোরশেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এসএম মাহমুদ সেতুকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এদের মধ্যে জিসান, তানিম ও মুস্তবা রাফিদ পলাতক রয়েছেন।