বেড়েছে পানির দাম, সঙ্গে ‘ভৌতিক বিলে’ ভোগান্তিতে গ্রাহক

খুলনা ওয়াসার বিরুদ্ধে পানি সরবরাহে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ইতোমধ্যে প্রতি ইউনিট পানির দাম ছয় টাকা থেকে ২৮ শতাংশ বাড়িয়ে আট টাকা ৯৮ পয়সা করা হয়েছে। এছাড়া মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে মধুমতি নদী থেকে পানি এনে সরবরাহ করা হলেও নগরীর নিম্ন আয়ের মানুষ তা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। কারণ, নগরীর বস্তি এলাকায় ওয়াসার সংযোগ নেই। এর ওপর ‘ভৌতিক বিল’ দিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়ানোরও অভিযোগ উঠেছে ওয়াসার বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় নিরাপদ পানি নিশ্চিতে নগরবাসী ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন। 

নগরীর পানি নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সিএসও নেটওয়ার্ক খুলনার সভাপতি মিনা আজিজুর রহমান বলেন, খুলনা মহানগরীর নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাসের এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে প্রান্তিক মানুষের পানির কষ্ট চলছে ৮-১০ বছর ধরে। প্রতি বছরই পানির কষ্ট বাড়ছে। অবস্থার পরিবর্তনে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে খুলনা ওয়াসা। প্রকল্পের মাধ্যমে মধুমতি নদী থেকে পানি এনে তা পরিশোধিত করে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু সংযোগ না থাকায় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। 

এছাড়া নগরের বিভিন্ন বস্তি এলাকার গভীর নলকূপে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।

এদিকে শুভশক্তি নেটওয়ার্কের খুলনার সভাপতি ঝর্ণা আক্তার বৃষ্টি বলেন, খুলনা ওয়াসা আবারও পানির দাম বাড়িয়েছে। পানি সরবরাহকারী এই সংস্থা পানির দাম সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এমনিতেই ঠিকমতো পানির সরবরাহ হয় না। এর ওপর পানি দাম বাড়িয়ে খুলনা ওয়াসা গ্রাহকদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

খুলনা ওয়াসা নয়-ছয়ভাবে পানি সরবরাহ করে ভৌতিক বিল দিয়ে গ্রাহকদের চরমভাবে হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করেন শুভশক্তি নেটওয়ার্কের ঝর্ণা আক্তার বৃষ্টি।
 
পরিবর্তন খুলনার নির্বাহী পরিচালক এম নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে তা ব্যবহারের উপযোগী নয়। পানি দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত। ময়লাযুক্ত পানি সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে অভিযোগ করলেও খুলনা ওয়াসা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। 

কেসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, এ বছর রমজান মাসে সংকটকালে বস্তি এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ লাঘবে জরুরি ভিত্তিতে পানি বিতরণের দাবি করেছিলাম। কিন্তু খুলনা ওয়াসা কোনও সাড়া দেয়নি। ওয়াসার কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তারা ব্যবসার জন্য মাথাভারী প্রশাসনে পরিণত হয়েছে। 

সুসমাজ নেটওয়ার্ক খুলনার সভাপতি শরিফ শাকিল বিন আলম বলেন, ইতোমধ্যে পানির দাবিতে মানববন্ধন করেছি। খুলনা ওয়াসার সঙ্গেও একাধিক সভা ও আলোচনা হয়েছে, কিন্তু তাদের আন্তরিকতা ও পদক্ষেপ এখনও দেখতে পাইনি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এলাকায় পানির সঠিক ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান যেসব আইন আছে, তা বাস্তবায়ন করা জরুরি।

এমন পরিস্থিতিতে খুলনা সিটি করপোরেশনে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর নাগরিক চাহিদা পূরণে নিরাপদ পানি নিশ্চিতে ১০ দফা দাবি জানানো হয়েছে।

১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে বস্তি এলাকায় ঘরে ঘরে পানির সংযোগ নিশ্চিত করা, বস্তি এলাকায় পর্যাপ্ত কমিউনিটি ট্যাপ স্থাপন এবং চাহিদা অনুসারে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা। এছাড়া বস্তি এলাকায় অচল টিউবওয়েলগুলো সচল করে প্রান্তিক পরিবারের পানির চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাশাপাশি সংকটকালে বস্তি এলাকায় পানি বিতরণ কর্মসূচি চালু করা, পানির এটিএম বুথ স্থাপন, প্রান্তিক পরিবারের জন্য পানির সংযোগ ও সার্ভিস চার্জ সহনীয় করা, ওয়ার্ড পর্যায়ে পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি তৈরি ও মনিটরিং জোরদার করা, খুলনা সিটি করপোরেশনের পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার স্থায়ী কমিটিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা, নিয়মিত পানি পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যসম্মত পানি নিশ্চিত করা এবং পানির সংযোগ প্রক্রিয়া সহজ ও আন্তকর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের দাবি উঠেছে। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা ওয়াসার এমডি এম আব্দুল্লাহ বলেন, পানির দাম বাড়লেও তা গ্রাহকদের জন্য সহনশীল পর্যায়েই রাখা হয়েছে। গ্রাহকদের গড়ে খুব বেশি বিল বাড়েনি। এছাড়া বস্তি এলাকায় পানি সরবরাহে ওয়াসাকে কিছুটা বেগ পেতে হয়। বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতায় বস্তিগুলোতে সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যেমন রেলওয়ের অনুমতি না পাওয়ায় রেলওয়ে বস্তি এলাকায় পানি সরবরাহ করা যায়নি। এছাড়া যেসব বস্তি এলাকায় সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং নম্বর নেই সেখানেও পানির সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তবে নতুন বাজার এলাকার বস্তিতে সম্প্রতি এক হাজার সংযোগ দিয়েছি।

এ সময় ভৌতিক বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা ওয়াসার এমডি দাবি করেন, ভৌতিক বিল বলতে কোনও বিল নেই। গ্রাহক পর্যায়ে পানি সরবরাহে মিটার ব্যবস্থা রয়েছে। মিটারে যা বিল আসে সেটাই গ্রাহকদের দিতে হয়। ভৌতিক বিল দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। 

দুর্গন্ধযুক্ত পানির বিষয়ে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন, টিঅ্যান্ডটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে প্রায়ই পানির পাইপ ফেটে যায়। এতে পানি দূষিত হয়। তবে অভিযোগ পেলে ওয়াসা পানির দূষণ কমানোর ব্যবস্থা নেয় বলে দাবি করেন তিনি।