৭ নম্বর বিপদ সংকেতের পরও চলছে যাত্রীবাহী ট্রলার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আরও ঘনীভূত হয়ে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সাগর ও নদীতে এখন উত্তাল ঢেউ। এর ফলে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। শহর ও গ্রামজুড়ে চলছে সতর্কতামূলক মাইকিং। কিন্তু এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে নদীতে চলছে যাত্রীবাহী ট্রলার। 

সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে মোংলার মামার ঘাট এলাকায় দেখা যায়, যাত্রী নিয়ে ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে একটার পর একটা ট্রলার। আবার মাছবোঝাই করেও পার হচ্ছে ট্রলার। 

আরও পড়ুন: মোংলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত, বন্দরে ঢুকতে পারেনি জাহাজ

সাখাওয়াত আকন (৪৫) নামে এক মাঝি বলেন, ‘সকাল থেকে অন্তত ২০টি ট্রিপ দিয়েছি। তাতে বেশিরভাগ ইপিজেডের নারী যাত্রী ছিলেন।’ 

মোংলা-৩

ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ট্রলার নিয়ে নদীতে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘরে বাজার নেই, চাল নেই। যা ইনকাম হবে তা দিয়ে দুপুরে বাজার করে ছেলেমেয়ে নিয়ে খেতে হবে। ট্রলার না চালিয়ে উপায় নাই!’

মাঝি ইব্রাহিম হোসেন (৩৮) বলেন, ‘পেটের জ্বালা বড় ক্ষুধা। পেটে ক্ষুধা থাকলে কোনও কিছুতেই ভয় কাজ করে না। পেটের জ্বালার মতো পৃথিবীতে কোনও অশান্তি নাই।’ 

মোংলা মাঝি মাল্লা সংঘের সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, ‘১৬০ জন ২০টি ট্রলার নিয়ে সকাল থেকে নদীতে আছেন। ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের পার না করলে তাদেরও তো সংসার আছে, তাদেরও পেট আছে। ঘূর্ণিঝড় আসলেও আমাদের কিছু করার নেই।’

মোংলা-১

দুপুর দেড়টায় ইপিজেড থেকে ফিরছিলেন কয়েকশ’ নারী শ্রমিক। তাদের মধ্যে রিনা বেগম (২৭) ও বিলকিস আক্তার (২৪) বলেন, ‘ফ্যাক্টরিতে না গেলে হাজিরা কাটবে। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ফ্যাক্টরিতে হাজিরা দিয়েছি।’ 

মোংলা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মাহাবুব আহম্মেদ সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সোমবার দুপুরে বিপদ সংকেত জারির কাগজ আসার পরই সবগুলো ফ্যাক্টরি ছুটি দিতে বলেছি। এখন সব ফ্যাক্টরি বন্ধ।’

আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন উপকূলের বাসিন্দারা

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর আমি নিজে মাইকিং করে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করে যাচ্ছি। এছাড়া সকালে ফেরিসহ সব নৌযান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। কোনও ট্রলার চললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে সকাল থেকে ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে উপকূলের বাসিন্দারা ছুটে যাচ্ছেন। তাদের জন্য মোংলা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মোংলা বন্দরের জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজও বন্ধ রাখা হয়েছে।