যশোরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা

আওয়ামী লীগে ‘দখিনা হাওয়া’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতি এখন উত্তাপ। সেই উত্তাপে এখন ‘দখিনা হাওয়া’র দোলাচল। এই হাওয়ায় রাজনীতির ঐতিহ্য জেগেছে নতুন আবহে; অগ্রহায়ণের মৃদুমন্দ শৈত্যপ্রবাহে আশা-আকাঙ্ক্ষার নতুন উষ্ণতা, দক্ষিণবঙ্গ জেগেছে নতুন পালকে। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) যশোরের সমাবেশে অংশ নিয়ে এই উষ্ণতার পালকে নতুন আশার সঞ্চার করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেওয়ার ৫০ বছর পর সেই যশোরের শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে উপস্থিত হচ্ছেন শেখ হাসিনা। দেশের দক্ষিণবঙ্গের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যগত প্রভাবে ‘নতুন স্বপ্ন আর প্রত্যাশার ডালি’ নিয়ে যাবেন প্রধানমন্ত্রী—এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। তারা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গে আওয়ামী লীগের যে ঐতিহ্যগত প্রভাব ও অবস্থান, বহুদিন পর যশোরে সমাবেশে শেখ হাসিনার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তা আদতে ‘দখিনা হাওয়া’ বয়ে এনেছে। কমে এসেছে নেতায়-নেতায় দূরত্ব। কাঁধ মিলিয়ে চলছে সমাবেশ সফলের কর্মতৎপরতা।

নেতাদের ভাষ্য, বিগত ১৩ বছরে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়নে যে বিস্তর ভূমিকা রেখেছে, তার কৃতজ্ঞতা জানাতেই শেখ হাসিনার মহাসমাবেশকে সফল করবেন এই বঙ্গের মানুষ।

বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন বলছেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে যে উন্নয়ন হয়েছে, বিশেষ করে পদ্মা সেতু, মোংলা পোর্ট, কালনা সেতু—এসবের জন্য দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। যশোরের জনসভা জনসমুদ্রে রূপান্তরের মাধ্যমে শেখ হাসিনার প্রতি যে এই অঞ্চলের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আছে, তার প্রমাণ দেবে।’

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে যশোরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা

স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা ঘিরে যশোরের রাজনীতির অঙ্গনে সুবাতাস বইছে। ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলার নেতাকর্মী। 

নেতারা মনে করছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পালে যে বাতাস লেগেছে তা সুবাতাস বলা চলে। যশোরের জনসভায় ব্যাপক জমায়েতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার আগমন ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা এখন দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে। এর কোনও ব্যত্যয় হবে না। তারা জানান, বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে দক্ষিণবঙ্গের আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ। 

স্থানীয় এমপি কাজী নাবিল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের জনসভায় জননেত্রী শেখ হাসিনা দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। সর্বস্তরের নেতাকর্মী তার নির্দেশনা ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করবো।’

দক্ষিণবঙ্গের আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষ্যমতে, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা রয়েছে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদী সরকারও। দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এখানকার মানুষজন সবসময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন। সামনের নির্বাচনেও তাই হবে।

‘শেখ হাসিনা সবসময় বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবেন, দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন’ এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। 

বুধবার বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ভাবে দল নিয়ে, দল বাঁচানো নিয়ে। বিএনপি আন্দোলন করছে দল বাঁচানোর জন্য। শেখ হাসিনা কাজ করছেন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। শেখ হাসিনা দেশ বাঁচানোর জন্য ২১ বার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। জীবন বাজি রেখে দেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতারা

বিএনপির সমালোচনা করে এস এম কামাল হোসেন উল্লেখ করেন, ‘খালেদা জিয়া সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বাংলাদেশ বানিয়েছিল। সেই দেশকে শেখ হাসিনা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছিল বলে পদ্মা সেতু হয়েছে, মধুমতি সেতু হয়েছে, মেট্রোরেল হয়েছে। বিএনপি নেত্রীর মুক্তির জন্য আন্দোলন করছে, তারেক রহমানকে দেশে আনার জন্য আন্দোলন করছে। জনগণের কল্যাণের জন্য, দেশের মানুষের জন্য বিএনপি কোনও কাজ করে না। তারা কাজ করছে তারেক রহমানের জন্য, যিনি মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছিল।’

এসএম কামাল অভিযোগ করেন, ‘তারেক রহমান দিনের বেলায় হাওয়া ভবনে বসে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি করতো, আর রাতে খোয়াব ভবনে ফূর্তি করতো। গত কয়েক বছর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকার কারণে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মূলত উন্নয়নের কারণেই যশোরের জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেবে। তারা আবার শেখ হাসিনার জনসভায় উপস্থিত হয়ে তাদের প্রিয় নেত্রীর প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করবেন।’ 

এ বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘যশোরের জনসভা ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনীতিতে সুবাতাস বইছে। গত কয়েক বছরের উন্নয়নে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। এরকম অবস্থা থাকলে আগামী নির্বাচনে কোনও আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হারবে না। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে মাঠপর্যায়ে আমাদের নেতাকর্মীরা আরও চাঙা হবে। রাজনীতির এই ধারবাহিকতা বজায় থাকবে।’