যশোরের খেজুর গুড় ও ফুল-সবজির প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী

যশোরে ঐতিহাসিক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‌‘যশোরের অবদানের কথা আমরা ভুলিনি। ১৯৭২ সালে জাতির জনক এই স্টেডিয়ামে ভাষণ দিয়ে মানুষের আশা জাগিয়েছিলেন। এই স্টেডিয়ামটিকে মানসম্মতভাবে উন্নত করে ১১ স্তর বিশিষ্ট করা হবে। যাতে ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে।’

যশোরের খেজুর গুড়, ফুল আর সবজির প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘যেমন খেজুর গুড়ের দেশ আবার ফুলে ফুলে শোভিত, ফুল উৎপাদনেও যশোর ১ নম্বরে আছে। আমরা কৃষকের সবরকম সুযোগ করে দিচ্ছি। ১০ টাকায় তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। দুই কোটি কৃষক সেই কার্ড পান। এক কোটি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। তাদের টাকা তাদের হাতে সরাসরি চলে যায়। ৯০ টাকায় সার কিনে মাত্র ১৬ থেকে ২২ টাকায় সেই সার আমরা কৃষককে দিচ্ছি। কৃষি উপকরণের কোনও অসুবিধা যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আমরা।’

যশোরকে দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই শেখ হাসিনা সফটওয়্যার আইটি পার্ক নির্মাণের ফলে দেড় থেকে দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এখন বিদেশ থেকেও বিনিয়োগ করা হচ্ছে।’ 

দেশের যুবসমাজকে বসে থাকার সুযোগ নেই উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাড়ি বসেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে উপার্জন করছে ছেলেময়েরা।’ 

বিএনপির শাসনামলের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেসময় শিক্ষার হার ৪৫ শতাংশ ছিল। বর্তমানে তা ছাড়িয়ে গেছে। ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে বই; তাদের বৃত্তি ও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছি আমরা।’

ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। অটোমেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে এই বন্দরে। ফলে মালামাল আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া সহজতর হয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতু, মধুমতি সেতু তৈরির ফলে যশোর, নড়াইল, খুলনাসহ এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। এই অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য খুব দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।’

‘যশোর অঞ্চলের বিশেষ অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে অভয়নগর উপজেলায় ইপিজেড করতে ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে ৪০০টি শিল্প প্লট করা হবে। যশোর বিমানবন্দর উন্নত করা হয়েছে। আমাদের সময়ে যশোর-কক্সবাজার রুটে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে’ যোগ করেন সরকারপ্রধান।  

যুবকদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে উৎসাহ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুবকদের স্বাবলম্বী হতে, নিজেরাই যেন কিছু করতে পারে; সে লক্ষ্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। যেমন বর্গা চাষিদের জন্য বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছি।’  

ঘরবাড়ির পাশের জায়গা কৃষির আওতায় আনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি ইঞ্চি জায়গার সদ্ব্যবহার করতে পারলে উপকার হবে সবার। একটা মরিচ গাছ লাগান, টমেটো গাছ, লাউ গাছ লাগান। এসব আমাদের সবার উপকারে আসবে।’

স্বাস্থ্যসেবার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রথম দফা ক্ষমতায় এসে আমরা কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চালু করেছিলাম। মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পেতো। কিন্তু  ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেই সেবা বন্ধ করে দেয়। এরপর আবার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু করেছি। মানুষ সেখান থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। যশোরে মেডিক্যাল করে দিয়েছি; এখন ৫০০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণের ব্যবস্থা করছি।’

দেশে কোনও গৃহহীন থাকবে না এমন অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী দেশে ৩৫ লাখ মানুষের ঘর করে দিয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘সেসব ঘরে থাকা মানুষের জীবনধারা বদলে গেছে। জাতির জনকের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছি।’

দেশের দারিদ্র্যসীমা ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরও কমাতে পারলে খুশি হতাম।’