বারবার বলেছি আর মারিস না, নেপথ্যে মোটরসাইকেলের মালিকানা

যশোর মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেন বিপ্লবকে মারধরের ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন জাকির হোসেন বিপ্লব (২৮)। পূর্বশত্রুতার জেরে তাকে কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ বলছে, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে তদন্ত কমিটির সদস্যরা আহত জাকির হোসেনের বক্তব্য শুনেছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে যশোর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র হোস্টেলের ১০৫ নম্বর রুমে জাকিরকে মারধর করা হয়। ঘটনার পরদিন বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সভাপতি করা হয় ডা. এন কে আলমকে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) জাকিরের বড় ভাই প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম যশোর কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দেন। তবে এখনও মামলা হয়নি। আহত জাকির রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর গ্রামের শহিদ জামানের ছেলে। 

মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা যায়, জাকির হোসেনকে মারধরকারীদের একজন শামীম হাসান। তিনি জাকিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একটি মোটরসাইকেলের মালিকানা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। দ্বন্দ্বের জেরে ঘটনার সূত্রপাত।

জাকির হোসেন জানান, তিনি মেডিক্যাল হোস্টেলের ১০৫ নম্বর রুমে থাকতেন। পাশের ১০৪ নম্বর রুমে প্রায়ই গাঁজার আসর বসে। তিনি প্রতিবাদ করতেন। গাঁজার আসরে শামীম হাসান, আব্দুর রহমান আকাশ, মেহেদী হাসান লিয়ন, শাকিব আহমেদ তানিমসহ আরও কয়েকজন বসতেন।

শামীমের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘তার উৎসাহে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হই। এরপর থেকে শামীমের হাতখরচ আমাকে দিতে হতো। খরচ চালাতে না পেরে একপর্যায়ে তার কাছ থেকে দূরে সরে আসি। এর জেরে ওই দিন আমার ওপর হামলা চালায় তারা।’

মোটরসাইকেলের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই মোটরসাইকেল আমারই। গত আট মাস ধরে আমি সেটি ব্যবহার করছি। শামীম সেটি তার দাবি করছে। কিন্তু সেটি আমার টাকায় কেনা।’

এসব বিষয়ে জানতে শামীম হাসানের মোবাইল ফোনে কয়েক দফায় কল দিলেও রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে কথা হয় যশোর মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন রাসেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না। তাদের সঙ্গে কী নিয়ে দ্বন্দ্ব তাও জানি না। মারধরের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন। প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি আমাদের পাশাপাশি আপনারাও জানতে পারবেন।’

আহত জাকির হোসেনের ভাই প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শনিবার দুপুরের পর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হাসপাতালে এসে জাকিরের সঙ্গে কথা বলেছেন। কমিটির সদস্যরা তার বক্তব্য শুনে সমবেদনা জ্ঞাপনের পাশাপাশি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’

এ বিষয়ে জানতে তদন্ত কমিটির প্রধান যশোর মেডিক্যাল কলেজের ডা. এন কে আলমের মোবাইলে কয়েকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

তবে তদন্ত কমিটির সদস্য যশোর মেডিক্যাল কলেজের প্রভাষক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে তদন্তের কাজ শুরু করেছি। আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি।  অভিযুক্তদের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। ক্যাম্পাসে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সেটি মাথায় রেখে নিরপেক্ষ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ মহিদুর রহমান বলেন, ‘যতটুকু জানি জাকিরের সঙ্গে শামীমের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। শুনেছি একটি মোটরসাইকেলের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব হয় তাদের। ওই দ্বন্দ্বের জেরেই ঘটনার সূত্রপাত।’

হোস্টেলের রুমে গাঁজার আসর বসানোর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। আমার ধারণা, তাদের একটু সময় লাগবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক একেএম শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘এখনও মামলা হয়নি। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। এটি একটি বড় ঘটনা। মামলা আজ হোক কাল হোক, তবে হবে। এরপরই আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো।’