সারাদেশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে যশোরের ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারে। এর ফলে এসি, ফ্যান, চার্জার ফ্যান ও এয়ারকুলার বিক্রি বেড়েছে। তবে এসব জিনিসের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
যশোর উপশহরের এফ ব্লকের বাসিন্দা কবিতা আফরোজ বলেন, ‘ভাড়া বাসায় থাকি। এসি কেনার ইচ্ছে আসলে ছিল না। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে মাত্রাতিরিক্ত গরমে ছোট শিশুদের নিয়ে বাসায় থাকা দায় হয়ে পড়েছে। সে কারণে এসি কিনতে হয়েছে। অন্তত একটু শান্তিতে ঘুমানো যাবে সেই আশায়।’
শহরের কয়েকটি ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে যশোরে এসি, ফ্যান, চার্জার ফ্যান ও এয়ারকুলার বিক্রি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। যা গত কয়েক বছরেও হয়নি। চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
শহরের রেলরোড এলাকার ইলেকট্রনিক শপ গ্লোবাল মার্টে কথা হয় রাকিব হোসেনের সঙ্গে। সদরের বাহাদুরপুর এলাকার বাসিন্দা রাকিব স্ত্রীকে নিয়ে দেড় টনের এসি কিনতে এসেছেন।
রাকিব বলেন, ‘এসি এখন আর বিলাসিতা নয়। সময়ের প্রয়োজন। গত এক সপ্তাহ ধরে যশোরে লু হাওয়া বইছে। রাস্তায় বের হওয়া যেমন সম্ভব হয়ে উঠছে না, তেমনি ঘরের ভেতরে থাকা দায়। প্রচণ্ড গরমে নাজেহাল অবস্থা। সে কারণে ধারদেনা করে এসি কিনেছি।’
কম দামে ভালো মানের এসি কেনার জন্য ভাইকে নিয়ে বাজারে এসেছেন শহরের আরএন রোডের বাসিন্দা মোমেনা খাতুন। গ্লোবাল মার্টে পরিচিত মানুষ থাকায় এখান থেকে দেড় টনের একটি এসি কিনেছেন তিনি।
গ্লোবাল মার্টের ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এখন এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রচণ্ড গরমের কারণে এবং ঈদে মানুষের হাতে টাকা থাকায় এসি বিক্রি হচ্ছে বেশি। প্রতিদিন ১০-১৫ এসি বিক্রি করছি আমরা। শহরকেন্দ্রিক ক্রেতা বেশি হলেও গ্রাম থেকেও ক্রেতারা আসছেন। বর্তমানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এসির কিছুটা সংকট আছে। এবার যে পরিমাণ এসি বিক্রি হচ্ছে, তা গত কয়েক বছরেও হয়নি। তবে দাম আগের মতোই নেওয়া হচ্ছে।’
শহরের বেস্ট ইলেকট্রনিকসের এক্সিকিউটিভ শিমুল রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন ১০টির বেশি এসি বিক্রি হচ্ছে। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি।’
সিঙ্গার শোরুমের শাখা ব্যবস্থাপক হুমায়ুন আজাদ বলেন, ‘আমাদের শোরুমে এখন এসির সংকট আছে। প্রতিদিন ১৩-১৪টি বিক্রি করেছি। একদিনে সর্বোচ্চ ২০টি বিক্রি করেছি। এখনও প্রচুর চাহিদা আছে।’
শহরের ওয়ালটন শোরুমের এক্সিকিউটিভ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গত তিন দিনে আড়াই শতাধিক চার্জার ফ্যান বিক্রি করেছি। তিনটি সাইজের পাঁচ মডেলের এসব চার্জার ফ্যান ৩৯৯০ থেকে শুরু করে ছয় হাজার ৪৯০ টাকা পর্যন্ত দাম নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘ওয়ালটনের দেড় টন ক্ষমতাসম্পন্ন এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। গড়ে প্রতিদিন ২০টির বেশি এসি ও ফ্যান বিক্রি হচ্ছে।’
স্যামসাং শোরুমের সেলস এক্সিকিউটিভ সজিব পাল বলেন, ‘আমাদের কাছে সবচেয়ে দামি এসি আছে। তবু ভালোই বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ১০টির মতো বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম একটু বেড়েছে। এটি চাহিদার কারণে নয়, আগেই বেড়েছে।’
শহরের মাইকপট্রি এলাকার ওলিয়ার ইলেকট্রনিকসের মালিক ওলিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা ফ্যান, চার্জার ফ্যান ও এয়ারকুলার সবচেয়ে বেশি বিক্রি করছি। প্রতিদিন এসব জিনিস ১৫-২০টির মতো বিক্রি হয়। তবে দাম আগের মতোই।’
গাজী ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিদিন ৩০টির বেশি রিচার্জেবল ফ্যান বিক্রি করছি। এক সপ্তাহ ধরে ফ্যানের চাহিদা বেশি।’
প্রসঙ্গত, গত এক সপ্তাহ ধরে যশোরে ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। সূর্যের তাপের পাশাপাশি রাস্তার বিটুমিন থেকেও উচ্চমাত্রায় তাপ বিকিরণ হওয়ায় শহরে দুপুরের দিকে লোকসমাগম কম হচ্ছে।