নৌকার ধাক্কায় জামানত হারালেন বাগেরহাটের ২১ প্রার্থী

বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনের সবগুলোতে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর ফলে চারটি আসনের ২১ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। ভোট গণনা শেষে রবিবার (৭ জানুয়ারি) রাতে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. খালিদ হোসেন বেসরকারিভাবে চার জনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

তারা হলেন—বাগেরহাট-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য বন-পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণায়লয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার ও বাগেরহাট-৪ আসনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ।

নির্বাচনি বিধি অনুযায়ী, নির্বাচনে কোনও আসনে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ কোনও প্রার্থী যদি না পান, তাহলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ আসনে শেখ হেলাল উদ্দিন দুই লাখ ১৯ হাজার ৯৩৯ ভোট পেয়ে ষষ্ঠবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মো. কামরুজ্জামান লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন পাঁচ হাজার ২১০ ভোট। এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের এইচ এম আতাউর রহমান ডাব প্রতীকে এক হাজার ১৭৫, এনপিপির বাসুদেব গুহ আম প্রতীকে দুই হাজার ৬৫, বিএনএমের মঞ্জুর হোসেন শিকদার নোঙ্গর প্রতীকে দুই হাজার ৭৯৬ এবং তৃণমূল বিএনপির মাহফুজুর রহমান সোনালী আঁশ প্রতীকে এক হাজার ৭৮৫ ভোট পেয়েছেন। এখানে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে নৌকা ছাড়া পাঁচ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

বাগেরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত শেখ সারহান নাসের তন্ময় নৌকা প্রতীকে এক লাখ ৮২ হাজার ৩১৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির হাজরা শহীদুল ইসলাম লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন চার হাজার ১৭৪ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আজমল হোসেন ঈগল প্রতীকে এক হাজার ৪৫৫, বিএনএমের সোলাইমান শিকদার নোঙ্গর প্রতীকে এক হাজার ৯০৭, তৃণমূল বিএনপির মরিয়াম সুলতানা সোনালী আঁশ প্রতীকে দুই হাজার ৭৬২ এবং জাকের পার্টির প্রার্থী গোলাপ ফুল প্রতীকে তিন হাজার ১৬৩ ভোট পেয়েছেন। এখানে ছয় প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী ছাড়া বাকি পাঁচ জন জামানত হারিয়েছেন।

বাগেরহাট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুন নাহার নৌকা প্রতীকে ৮৪ হাজার ৩৭২ ভোট পেয়ে চতুর্থবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইদ্রিস আলী ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৪৬৮ ভোট। এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের মফিজুল ইসলাম ডাব প্রতীকে ২০৮, বিএনএমের বিএনএমের সুব্রত মন্ডল নোঙ্গর প্রতীকে ৪২৩, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে ম্যানুয়েল সরকার ২২৮, জাতীয় পার্টির মো. মনিরুজ্জামান মনি লাঙ্গল প্রতীকে ৬৭০ ও জাসদের শেখ নুরুজ্জামান মশাল প্রতীকে ৩৩৮ ভোট পেয়েছেন। এই আসনে সাত জন প্রার্থী। এর মধ্যে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া বাকি পাঁচ জন জামানত হারিয়েছেন। 

মোংলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‌‘নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী কোনও প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে মোট প্রদত্ত ভোটের (কাস্টিং ভোট) আট ভাগের এক ভাগ থেকে অন্তত একটি ভোট বেশি পেতে হয়। এখানে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৮৫৮ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৯৩০ ভোট। জামানত রক্ষার জন্য একেকজনের প্রয়োজন ছিল ১৮ হাজার ৪৯২টি।’ 

বাগেরহাট-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ নৌকা প্রতীকে এক লাখ ৯৯ হাজার ৩৪ ভোট পেয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জামিল হোসাইন ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৭৬ ভোট।
এছাড়া বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ছড়ি প্রতীকে ৯৯২, বিএনএমের রেজাউল ইসলাম রাজু নোঙ্গর প্রতীকে ৬৩৬, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে লুৎফুন্নাহার রিক্তা  ৬০৭, জাতীয় পার্টির সাজন কুমার লাঙ্গল প্রতীকে দুই হাজার ২২০ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির লোকমান হোসেন আম প্রতীকে এক হাজার ৬১১ ভোট পেয়েছেন। এই আসনে সাত জন প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী ছাড়া বাকি ছয় জন জামানত হারিয়েছেন।