স্ত্রী-সন্তানসহ ৩ জনকে গুলি করে হত্যা, পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড

কুষ্টিয়ায় প্রেমের জেরে নিজের স্ত্রী-সন্তান ও এক যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশের সাবেক এএসআই সৌমেন রায়কে (৩৪) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমীন এ রায় দেন। এ সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সৌমেন রায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

কুষ্টিয়া আদালতের পরিদর্শক জহুরুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সৌমেন রায় মাগুরা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের আসবা গ্রামের সুনীল রায়ের ছেলে। ২০১৫ সালে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদোন্নতি পান। পরে ২০১৬ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় যোগ দেন। সেখান থেকে মিরপুর থানার হালসা ক্যাম্প, বাগেরহাট থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত ছিলেন।

মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ জুন বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড় এলাকার নাজ ম্যানশন মার্কেটের বিকাশের দোকানের সামনে স্ত্রী আসমা খাতুন (২৫), আসমার ছেলে রবিন (৫) ও আসমার প্রেমিক শাকিলকে (২৮) সরকারি অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন এএসআই সৌমেন রায়। এ ঘটনায় পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে সার্ভিস রিভলভার, গুলি ও ম্যাগাজিনসহ আটক করে। পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়। একই দিন রাতে তাকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম।

পরদিন ১৪ জুন বিকালে কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনামুল হকের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন আসামি। এরপর কুষ্টিয়া আদালতে বারবার আত্মসমর্পণের দিন ধার্য থাকলেও তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পলাতক রয়েছেন সৌমেন।

প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় দায়িত্বে থাকাকালীন এএসআই সৌমেনের সঙ্গে একটি মামলাকে কেন্দ্র করে আসমার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সময় সৌমেন তার পরিচয় গোপন করে মো. সুমন হোসেন রাখেন এবং সুমন নামেই মুসলিম বিধানমতে আসমাকে বিয়ে করেন। সৌমেন আসমার তৃতীয় স্বামী ছিলেন। বিয়ের পর থেকেই কুষ্টিয়ার আড়ুয়াপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় তারা বাস করছিলেন।

ওই এএসআই খুলনার ফুলতলা থানায় বদলি হওয়ার পর থেকেই বিকাশকর্মী শাকিলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান তার স্ত্রী। এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি স্বামী। সেই ক্ষোভ থেকেই প্রকাশ্যে স্ত্রী তাদেরকে গুলি করে হত্যা করেন।