বাংলাদেশের কাস্টমস ফাঁকি দিয়ে চালান হওয়া সোনা ধরা পড়লো ভারতে

আবারও যশোরের বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে ১০টি (এক কেজি) সোনার বারসহ তিন বাংলাদেশিকে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ভারতের ১৪৫ ব্যাটালিয়নের বিএসএফের একটি সূত্রে এ তথ্যে জানা গেছে।

বিএসএফ জানিয়েছে, এই তিন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী বাংলাদেশ কাস্টমস পার হয়ে পেট্রাপোল চেকপোস্টে এলে তাদের গতিবিধি সন্দেহ হলে ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করা হয়। একপর্যায়ে মেশিনের মাধ্যমে তাদের পেটের মধ্যে সোনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পরে পায়ুপথে ১০টি সোনার বার পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ৬৫ লাখ রুপি। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক কোটি। আটক ব্যক্তিরা পায়ুপথে সোনার চালানটি বহন করছিল। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ভারতের বনগাঁ মহকুমার পেট্রাপোল থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

আটক ব্যক্তিরা হলেন- শরীয়তপুরের চিকান্দী উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের রাজ্জাক মুন্সীর ছেলে আবু বক্কর মুন্সী, ঢাকার ওয়াদালোদী তুরাগ এলাকার রুস্তম শেখের মেয়ে পারভীন আক্তার (৪৪) ও মানিকগঞ্জের সদর এলাকার তারা গ্রামের পিয়ার আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪৬)।

এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি আড়াই কেজি ওজনের ২২টি সোনার বারসহ আমদানি পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক চালক রাজু দাস, সঞ্জীব দাসকে আটক করে বিএসএফ। একই দিনে পাসপোর্টধারী যাত্রী রিবা উদ্দিনকে তিনটি সোনার বারসহ আটক করে। এ ছাড়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮৫০ গ্রাম ওজনের সোনার বারসহ আবু বক্কর হানিফা ও জিয়া উদ্দীন নামে দুই ভারতীয় পাসপোর্টধারীকে আটক করে ভারতের সীমান্তরক্ষীরা। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নাজরীন নাহার নামে এক বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী পায়ুপথে লুকিয়ে পাচারের সময় চার পিস সোনার বারসহ আটক করে।

ভারতের ২৪ পরগনা সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের পাবলিক রিলেশন্স অফিসার ডিআইজি শ্রী এ কে আর্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কোনও অবস্থাতেই সীমান্তে চোরাচালান বা অন্য অপরাধ ঘটতে দেবে না। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ছাড় দেবে না বিএসএফ। চোরাচালান প্রতিরোধে সহযোগিতা কামনা করছে বিএসএফ।

জানা গেছে, বেনাপোল কাস্টমসের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে সোনা পাচারের ‘গোল্ডেন রুট’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর। তবে সোনা নিয়ে নির্বিঘ্নে বেনাপোল পার হয়ে গেলেও পেট্রাপোলে গিয়ে প্রায় প্রতিদিন ধরা পড়ছে চোরাকারবারিরা। এদিকে, পাচার রোধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আরও জোরালো পদক্ষেপ নিলেও বাংলাদেশ কাস্টমসে এ নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই।

অভিযোগ উঠেছে, এসব পাচার কার্যক্রমে কাস্টমসের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের সখ্যতা থাকতে পারে। ফলে স্ক্যানিং মেশিন মেরামত বা যাত্রীর ব্যাগেজ তল্লাশিতে অনীহা রয়েছে।এখানে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, সোনার চালান বাংলাদেশে ধরা পড়ছে না। কিন্তু ভারতে কীভাবে ধরা পড়ছে?

বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চারটি স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করে। একটি মোবাইল স্ক্যানার স্থাপন করা হয় বন্দরের বাইপাস সড়কে পণ্য প্রবেশ দ্বারে। অত্যাধুনিক মেশিনটি পণ্যবাহী ট্রাকে আসা রাসায়নিক, মাদক, অস্ত্র ও মিথ্যা ঘোষণার পণ্য শনাক্ত করতে সক্ষম। এ ছাড়া বেনাপোল চেকপোস্ট ও রেল স্টেশনে আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন-কাস্টমস রুটে চোরাচালান রোধে আরও তিনটি স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়। স্ক্যানিং মেশিনটি কাস্টমসের পক্ষে পরিচালনা করে আসছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস। তবে স্ক্যানিং মেশিনগুলোর মধ্যে তিনটি যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ায় গত চার মাস ধরে স্ক্যানিং কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে এ পথে। এতে অবাধে আমদানি পণ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রীর মাধ্যমে সোনা ও মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চোরাচালান ব্যাপকহারে বেড়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-কলকাতা রুটে যাত্রী নিয়ে চলাচলকারী পরিবহনগুলোতে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে চোরাচালানে।

স্ক্যানিং মেশিন তদারকিতে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটসের বেনাপোল অফিস ব্যবস্থাপক বনি আমিন বলেন, ‘স্ক্যানিং মেরামত করতে বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। চুক্তি অনুযায়ী কাস্টমস তার ব্যয় বহন করার কথা থাকলেও, এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্ক্যানিং মেশিন তিনটির কার্যক্রম বন্ধ আছে।’