বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে যেকোনও কিছু ত্যাগে প্রস্তুত ছিলেন: কাজী নাবিল

যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার একটি গ্রাম থেকে উঠে এসেছিলেন। সেখান থেকে ফরিদপুর হয়ে কলকাতা এবং সেখান থেকে ঢাকায় ফিরে তৎকালীন পাকিস্তানের একজন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।’

রবিবার (১৭ মার্চ) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে যশোর জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

রবিবার বেলা ১১টায় যশোর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার।

কাজী নাবিল বলেন, ‘অনেক ইতিহাসের মধ্যে একটি হচ্ছে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একমাত্র বাঙালি নেতা ছিলেন না। তখন অনেক বাঙালি নেতা তৎকালীন পাকিস্তানে রাজনীতি করতেন কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিসরে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, খাজা নাজিমউদ্দিনসহ বহু নেতা কাজ করেছেন। তারা পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। আরও অনেক নেতা পাকিস্তানের তৎকালীন সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্যও হয়েছেন। সব শ্রদ্ধাভাজন নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন পদে থাকলেও তারা কিন্তু একটি কাজ করেননি, যা করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিও পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছিলেন, গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। তখন আমাদের অন্য সব বাঙালি নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে কেউ আপসহীন ছিলেন না। একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে যেকোনও কিছুই ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। তার জীবন-যৌবনের দিনগুলো ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। এ জন্য তিনি জীবনের ১৪ বছর কারাগারে পার করেছেন, বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য।’

এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নির্দ্বিধায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন, যদি তিনি ছয় দফার যেকোনও একটা বা দুইটা দফার সঙ্গে আপস করতেন। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, ৬ দফা হচ্ছে বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ, তিনি এই ছয় দফার সঙ্গে কোনও আপস করবেন না। বঙ্গবন্ধুর মূল গুণ ছিল, বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি কখনও পিছপা হননি।’

বঙ্গবন্ধু কখনও জীবনের মায়া করেননি উল্লেখ করে কাজী নাবিল বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি যখন স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন, তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি নিশ্চিত ছিলেন না, আর কোনোদিন বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারবেন কিনা। তাকে হত্যা করার জন্য, ফাঁসি দেওয়ার জন্য সব ব্যবস্থাই প্রস্তুত রেখেছিল তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকরা। কিন্তু তিনি পিছপা হননি। তিনি বলেছিলেন, মুসলমানের মৃত্যু একবারই হয়। তোমরা আমার লাশটি আমার বাংলায় পাঠিয়ে দিও। এটিই ছিল তার একমাত্র আবেদন।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতার জন্য, বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই কারণেই তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা তার জন্মদিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন। কারণ আজকের শিশুরাই হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ।’

তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘জাতির জনক যে আদর্শে বলীয়ান হয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছিলেন, তার সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে আমরা তার ঘোষিত মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। এখন তিনি লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশের। আজকে যারা সামনে বসে আছো, সেই শিশুরাই আগামী স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক। স্মার্ট বাংলাদেশ তোমাদের হাত দিয়েই তৈরি হবে। সে লক্ষ্যে করণীয় সবকিছুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পন্ন করতে দিনরাত কাজ করে চলেছেন।’

অন্যদের মধ্যে যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, যশোরের সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা অশোক রায়, দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক একরাম-উদ-দ্দৌলা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জেলা সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু, যশোর জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী সৌভিক দাস স্বচ্ছ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।