মায়ের ‘হত্যার’ বিচার দাবিতে মানববন্ধনে ১২ মাস বয়সী জান্নাত

ঈদের নামাজ শেষে যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহের সামনে প্রায় ১২ মাস বয়সী জান্নাতুল মাওয়াকে কোলে নিয়ে তার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশেদ খান। এ সময় শিশুটির মামা, নানি, স্বজনসহ প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন।

শিশুটির মায়ের নাম সুমাইয়া আক্তার সুমনা (২০)। তার স্বামীর নাম হৃদয় হাসান।

শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সুমনার স্বজনরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘সুমনার স্বামী হৃদয় হাসান একজন জুয়াড়ি ও যৌতুকলোভী। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে ক্রমাগত যৌতুকের ব্যাপারে চাপ দিতো। প্রতিনিয়ত যৌতুকের জন্য সুমনাকে মারধর করা হতো। গত ২৯ মে তার নিষ্ঠুর স্বামী খুব মারধর করে তাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরদিন সুমনার বাবা-মা মেয়েকে বুঝিয়ে সুজিয়ে তাকে আবার শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেন। ওই দিন (৩০ মে) বিকালে ঝুলন্ত অবস্থায় সুমনার লাশ উদ্ধার করা হয়।’

রাশেদ খানের দাবি, এটি হত্যাকাণ্ড এবং তা ধামাচাপা দিতে শ্বশুরবাড়ি লোকজন প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে তদবির করছে।

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা না হলে খুব শিগগিরই আমরা আন্দোলনে যাবো।’

সুমনার বড় ভাই যশোর সদরের চাঁদপাড়া এলাকার সুমন হোসেন বলেন, ‘৩০ মে সকাল ১০টার দিকে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় বোনকে ইজিবাইকে করে শ্বশুরবাড়ি পাঠাই। বিকালে আমার বোন তার ভাবির ফোনে কল দিয়ে জানায় মায়ের সঙ্গে কথা বলবে। সেসময় আমি পাশেই ছিলাম। বোনটি মাকে বলে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তারা খুব খারাপ আচরণ করছে। ওই সময় সুমনার শাশুড়ি ও ঢাকা থেকে আসা তার ননদের গালমন্দ চিৎকার-চেঁচামেচি শব্দ শুনতে পাই। হঠাৎ করে তার ফোন বন্ধ হয়ে গেলে আমি দুই দফায় কল দিয়েও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এরপর আছরের নামাজ শেষে হৃদয়ের বাবার ফোন পাই। তিনি জানান, বোন আত্মহত্যা করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দ্রুত মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে যাই। বাড়ি প্রবেশের আগেই হৃদয়ের বোনজামাই আমাদের বলেন, সুমনাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, সে ভালো আছে। কিন্তু হাসপাতালে এসে আমরা বোনটির লাশ দেখতে পাই। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তারা আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।’

বোনের সুখের কথা চিন্তা করে তারা জমি বিক্রি করে জামাই হৃদয়কে একটি গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন এবং সংসারের যাবতীয় আসবাবপত্রও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট ছিল না হৃদয়। আরও টাকার দাবিতে সে সুমনাকে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত খান বলেন, ‘লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে মামলা হয়েছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত ৩০ মে যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বড়গোপালপুর গ্রামের নিজ শয়নকক্ষ থেকে সুমনার গলায় ফাঁস দেওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়।