কুষ্টিয়ায় করোনা শনাক্তের জন্য স্থাপিত পিসিআর ল্যাব ভবনে চুরির ঘটনা ঘটেছে। একটি পিসিআর যন্ত্রসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়নি।
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা যায়, করোনা শনাক্তের জন্য ২০২০ সালের ৯ মে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে একতলা একটি টিনশেড ভবন সংস্কার করে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। তখন গণপূর্ত বিভাগ রাত দিন মাত্র চার দিন সংস্কারকাজ করে ৯ মে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ভবনের উদ্বোধন করেন।
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক নাজমীন রহমানের তত্ত্বাবধানে সেখানে করোনাভাইরাস শনাক্তের কাজ চলতে থাকে। ভবনের তিনটি কক্ষে কয়েকটি বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় দামি যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়। করোনা সংক্রমণ একেবারে কমে গেলে পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে ভবনে কলেজের দুজন কর্মচারীকে ল্যাব দেখাশোনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও থানায় জমা দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চুরির ঘটনায় গত ১২ মে ল্যাবে দায়িত্বরত কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট খাইরুল ইসলাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১০ মে তিনি কাজ শেষ করে দুপুরে বাড়িতে চলে যান। ১১ মে সরকারি ছুটি থাকায় ১২ মে ল্যাবে গিয়ে দেখতে পান, ল্যাবের পেছনের জানালার গ্রিল কাটা এবং ল্যাবের একটি পিসিআর যন্ত্র, একটি মনিটর, একটি পিসিআর ডেস্কটপ, একটি এসির ইনডোর অংশ ও ছয়টির আউটডোর অংশ নেই। যার সর্বমোট মূল্য আনুমানিক দাম ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
কুষ্টিয়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান খান বলেন, চুরির ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসনসহ মেডিক্যাল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা সেখানে যান। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালককে জানানোর পর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সেদিন ল্যাব থেকে আরও তিনটি পিসিআর মেশিনসহ অন্য দুই কক্ষে থাকা যন্ত্রাংশ মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে সরিয়ে নেওয়া হয়। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে করোনা শনাক্তের জন্য যন্ত্রগুলো স্থাপন করা সম্ভব হবে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, চুরির ঘটনায় আমাকে সদস্যসচিব করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের অবহেলা আছে। বর্তমানে করোনা রোগীর চিকিৎসায় একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ মৌসুমে এখনও রোগী শনাক্ত হয়নি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশাররফ হোসেন বলেন, থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। ওই অভিযোগপত্রে অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ আরও কিছু অসংগতি ছিল। সেগুলো ঠিক করে আবার অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এরপর আর কেউ যোগাযোগ করেনি।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে কুষ্টিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৮৫৫ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজারের বেশি মানুষ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যান। এই মাসে জেলাটিতে ৩৪২ জন মারা যান। আগস্টের পর থেকে এই মৃত্যুর হার কমতে থাকে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন-সংকটে হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যান।