জুলাই যোদ্ধাদের বাদ দিয়ে দোয়া মাহফিল করে তোপের মুখে খুলনার ডিসি

জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে তোপের মুখে পড়েছেন খুলনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফুল ইসলাম। অভিযোগ উঠেছে, তিনি প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বাদ দিয়ে ‘বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগের দোসরদের’ নিয়ে এই অনুষ্ঠান করেছেন।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে খুলনা নগরীর কালেক্টর মসজিদে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার।

অনুষ্ঠান চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন কর্মী দোয়া মাহফিলে এসে তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক আওয়ামী লীগের দোসর ও বিভিন্ন গুপ্ত সংগঠনের ছাত্রদের নিয়ে এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন। এই আন্দোলনে যারা প্রকৃতপক্ষে আহত হয়েছেন, যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের কাউকেই এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ অনুষ্ঠানে যাদের দাওয়াত করা হয়েছে তারা চোর বাটপার।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুলনা জেলা ও মহানগরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বা সহ-সমন্বয়ক কাউকেই এই অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি। জেলা প্রশাসক এখানে একপেশে আচরণ এবং চরম স্বেচ্ছাচারিতা করছেন।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের এই ক্ষোভ নতুন নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানান, এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ৩৬ দিনের কর্মসূচি পালনের অনুমতি ও সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের দফতরে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সে সময় তার অফিসের ভেতরেই অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এবং পরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরেছিলেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো- সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া, জুলাই যোদ্ধা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না রাখা ও তাদের উপেক্ষা করা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অসৌজন্যমূলক আচরণ করা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

তারা বলছেন, যেখানে একটি দোয়া মাহফিল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ হওয়ার কথা, সেখানে এমন একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে বিভেদ ও উত্তেজনা খুলনার সার্বিক পরিস্থিতিতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, দোয়া মাহফিল চলাকালে একজন উঠে দাঁড়িয়ে বলতে থাকেন, এখানে যাদের দাওয়াত করা হয়েছে তারা চোর বাটপার। দোয়া মাহফিলে খুলনার শহীদ সাকিব রায়হানের বাবা ছিলেন। আন্দোলনে চোখ হারানো আব্দুল্লাহ আল শাফিল ছিলেন। জুলাই আন্দোলনের সাফল্য যারা চায় না, এমন একটি গ্রুপ এমন একটি দোয়া মাহফিলের মতো পবিত্র অনুষ্ঠানে এসে বাধা দেয়। শহীদের পিতা, চোখে গুলিবিদ্ধ আহতদের অপমান করেছেন। চোর বাটপার শুনে শহীদ সাকিবের বাবা কেঁদেছেন। শাফিল কষ্ট পেয়েছেন। আমরা শেষ পর্যন্ত দোয়া মাহফিল সম্পন্ন করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি তাদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাইফ নওয়াজ বলেন, সরকারি এ অনুষ্ঠানে জুলাই যোদ্ধা চোখ হারানো শাফিল ছিলেন, শহীদ সাকিব রায়হানের বাবা ছিলেন। সেখানে ছাত্রদলের একজন এসে বাধা দিয়ে জুলাই যোদ্ধাদের অপমান করেছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। আর সরকারি অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে সরকারি কোনও পদক্ষেপ হলে সে সিদ্ধান্তের সঙ্গে থাকবেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপী বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদ স্মরণে দোয়া মাহফিলে সর্বোচ্চ সংখ্যক জুলাই যোদ্ধার অংশগ্রহণ থাকতে হবে। এ অনুষ্ঠানে কোনও জুলাই যোদ্ধার অংশগ্রহণ ছিল না। এটা কোনও বিরোধ নয়। প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ।