ময়মনসিংহে ১২ হাজার হেক্টর জমির ধান পানির নিচে

mymensingh-flood-1টানা বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহ জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, ফুলপুর, ঈশ্চরগঞ্জ, গৌরীপুর, ভালুকা, ত্রিশাল, নান্দাইল, ময়মনসিংহ সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাপক ফলসহানির ঘটনা ঘটেছে। এতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

জেলা কৃষি খামারবাড়ির তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৩ মেট্রিক টন। বর্তমানে জেলার ফুলপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর, তারাকান্দা সাড়ে ৬শ’ হেক্টর, ধোবাউড়া ১ হাজার ২০০ হেক্টর, হালুয়াঘাট ১ হাজার ১০০ হেক্টর, নান্দাইল ৯শ’ হেক্টর, ত্রিশাল সাড়ে ৪শ’ হেক্টর, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ১ হাজার হেক্টর, ভালুকা ২ হাজার ৫শ’ হেক্টর ও গৌরীপুর উপজেলার ৭শ’ হেক্টর জমির বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এর ফলে ধান গাছে পচন ধরেছে। আর কয়েক দিন পানির নিচে থাকলে কৃষকরা এই ধান আর কেটে বাড়িতে আনতে পারবে না এমনটাই জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

ফুলপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, হালুয়াঘাট হয়ে ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বোরো ধান এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানির নিচে থাকায় ধান গাছে পচন ধরতে শুরু করেছে। পানি বাড়তে থাকায় কৃষকরা এই ধান আর ঘরে তুলতে পারবে বলে মনে হয় না।mymensingh-flood-2

তিনি আরও জানান, প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে এবং ধান পানির নিচে চলে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এলাকায় গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করছেন। তবে সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে এমনটাই দাবি এই জনপ্রতিনিধির।

ধোবাউড়া উপজেলার কৃষক নাজমুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি ঢলে প্রতি বছরই নিম্নাঞ্চলের কিছু না কিছু বোরো ফসল ক্ষতি হয়, কিন্তু এবারের অকাল বৃষ্টিতেই বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো আবাদের।

তিনিন আরও জানান, তার প্রায় ২ একর জমির বোরো ধান এখন পানির নিচে আছে। পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও ক্ষতিতে পরতে হবে বলে জানান তিনি।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ জানান, মগটুলার মধুপুর এলাকা থেকে শুরু করে খালবলা বাজার হয়ে কাঁচামাটিয়া নদী সংলগ্ন কয়েকশ’ হেক্টর আবাদি জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এছাড়া আরও ৩৪টি বিলের নিচু এলাকার শতাধিক হেক্টর জমির আধাপাকা ধান তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বিলগুলোর মধ্যে রয়েছে সদর ইউনিয়নের শিরনি বিল, পুলুঙ্গা বিল, মাইজবাগ ইউনিয়নের কাতলা, শিবলী, বিলরাউল, হিঙ্গি ও কান্দি ভাঙ্গা। বড়হিত ইউনিয়নের আন্ড্রাইল, গোঁজা, বেইল, পাইঙ্গা, উল্কী, নাইওরী ও সখিনা বিল।

তিনি আরও জানান, কৃষকের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে অকালের ভারি বর্ষণ। কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে আধাপাকা বোরো ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। বছরের প্রধান ফসল নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এখানকার ধান চাষিরা।

এদিকে জেলা কৃষি খামারাবড়ির ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, সারাদেশের মতো ময়মনসিংহের বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, নিমজ্জিত এলাকার ধান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার খুব বেশি হেরফের হবে না। তবে কৃষকদের ৮০ শতাংশ ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গেই কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়ার কথা জানান তিনি।

/এআর/