সম্মিলিত হাওর রক্ষা কমিটির নেতা গাগলাজুর এলাকার বাসিন্দা কাজল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ত্রাণ চাই না, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ চাই। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী খালিয়াজুরীতে আসছেন, এ জন্য আমরা গর্বিত। আমাদের দাবি একটাই। আমরা হাওরে স্থায়ী বাধঁ নির্মাণ চাই।’
কাজল চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘হাওরের অনেক বাঁধের কাজই শুরু করেননি ঠিকাদার ও পিআইসি। যে কারণে পানি এসে সরাসরি হাওরে ঢুকে পড়েছে। এতে অনেক কৃষকের স্বপ্নও তলিয়ে গেছে।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টির কারণে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল, মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীসহ জেলার ৮৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৯টি ইউনিয়নের বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লক্ষাধিক কৃষি নির্ভর পরিবার। এসব পরিবারের দাবি অনুসারে হাওরের ধান, মাছসহ অন্যান্য ক্ষতির পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা। এমন ক্ষতিতে এসব অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ভিজেএফ কার্ড দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এখনও ত্রাণ পাননি।
কৃঞ্চপুর এলাকার মণিভূষণ দাসের স্ত্রী মালা জানান, ‘চালের দাম ৭৫ টাকা। সংগ্রহ করতে ট্রলার ভাড়া দিতে হয় ৫৫ টাকা। কী করি বলেন? এলাকা থেকে এই চাল সংগ্রহ করলে আমাদের সুবিধা হতো।’
জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিলাশ চন্দ্র পাল বলেন, ‘প্রায় ৭৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল আগাম বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৪ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন ধান নষ্ট হয়েছে। এই ধান থেকে ২ লাখ ৮১ হাজার মেট্রিক টনের মতো চাল উৎপাদন হতো। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৯৫৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আহম্মদ জানান, হাওরে মাছের মড়কে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ১ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন মাছ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৫২৮ জন জেলে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জেলার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, মদন ও বারহাট্টা উপজেলায় সরকারি হিসেব মতে মৎস্য খাতে ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয়েছে আনুমানিক ২৪ কোটি টাকা।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল পৌনে ১০টায় নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় পৌঁছাবেন। এরপর খালিয়াজুরী কলেজমাঠে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও দুস্থ মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করবেন। পরে স্থানীয় কলেজ মাঠের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। সেখান থেকে নগর ইউনিয়নের বল্লভপুর এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে তার। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
/এএ/