ভাস্কর্যের মাধ্যমে গণহত্যার ইতিহাস সংরক্ষণের দাবি সোহাগপুরবাসীর

shohagpur১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামের মানুষের জন্য বীভৎস একটি দিন। এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা গণহত্যা চালায় এই গ্রামে । গণহত্যার বলি হন গ্রামের ১৮৭ জন নিরীহ পুরুষ। বিধবা হন ৬২ জন গৃহবধূ। পরে পুরুষ শূন্য এই গ্রামটির নামকরণ করা হয় ‘বিধবা পল্লী’। ভাস্কর্যের মাধ্যমে সোহগপুরের গণহত্যার এই ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

একাত্তরে পাকিস্তানিদের হাতে নিহত ১৮৭ জনের নাম সংরক্ষণের জন্য একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। কিন্তু সোহাগপুরের বিধবা পল্লীর ইতিহাস সংরক্ষণে এটি যথেষ্ট নয় বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। এইসব বিধবা ও বীরাঙ্গনারা সবাই যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন , তখন হয়তো মুছে যেতে পারে সোহাগপুর বিধবা পল্লীর নাম। হয়তো নতুন প্রজন্ম বিধবা পল্লীর সঠিক ইতিহাস ভুলে যাবে। তাই এলাকাবাসী জোর দাবি জানিয়েছেন, যেন ভাস্কর্যের মাধ্যমে গণহত্যার ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়।

এদিকে এই দিনটার কথা মনে পড়লেই বীরাঙ্গনা সমলা বেগম (৭৬) কেন জানি নিজের আবেগটা ধরে রাখতে পারেন না। অঝরে কাঁদতে থাকেন। চোখের সামনে নিজের স্বামী, সন্তান আর স্বজনের লাশ একসঙ্গে পৃথিবীতে কম মানুষই দেখেছেন। শুধু সমলা বেগমই না, একাত্তরে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গণহত্যায় অনেক নারীই চোখের সামনে হারিয়েছেন স্বামী, সন্তান ও স্বজন। অনেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে হারিয়েছেন নিজের সম্ভ্রম।

সেইসময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের বর্বরতার শিকার হন ১৩ গৃহবধূ। সম্প্রতি ওই বর্বরতার শিকার ১৩ জন বিধবার মধ্যে ছয় জনকে সরকার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছেন, বাকী সাত জন স্বীকৃতির আশায় বুক বেঁধে আছেন।hotta

সোহাগপুর বিধবা পল্লীর ৩০ শহীদ পরিবারের সদস্য ও বিধবারা পাকা ঘর পাচ্ছেন । ইতোমধ্যে এলজিইডির অর্থায়নে ১০টি ঘর নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বর্তমান সরকার প্রথম ধাপে বিধবা পল্লীর নুর ভানু, করফুলি খাতুন , জরিতন খাতুন, হাফিজা খাতুন, জমিলা খাতুন, ফাতেমা খাতুন, হাজেরা খাতুন, ছাহেরা খাতুন, হাজেরা বেওয়া ও হাছেন ভানু এই দশজন বিধবার জন্য একটি করে পাকা ঘর নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছেন। অপরদিকে, সোহাগপুর বিধবা পল্লীর বিধবারা প্রতিমাসে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগিতায় প্রতিজন ২ হাজার টাকা, ব্রাকের সহযোগিতায় প্রতিজন ৪০০ টাকা পেয়ে থাকেন। আর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়া ৬ জন বীরাঙ্গনা প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন।
বর্তমানে এ বিধবা পল্লীতে কালের সাক্ষী হয়ে বেঁচে রয়েছেন ২৮ জন বিধবা। এইসব বিধবারা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে এখনও শঙ্কায় রয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তাদের সাহায্য সহযোগিতায় অনেকেই এগিয়ে এলেও কার্যকরী কোনও স্থায়ীভাবে উপকার পাননি তারা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেন স্বামী সন্তানের শোক বুকে চেপে একটু ভালো-মন্দ খেয়ে, পড়ে বেঁচে থাকতে পারেন এটাই একমাত্র চাওয়া তাদের।

সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যণ সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন জানান, ‘তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর দেওয়া কৃষি সমন্বয়ক পাওয়ার টিলার, মাশরুম ও বনায়ন প্রকল্পগুলো চালু থাকা অবস্থায় বিধবারা একটু ভালো ছিলেন, তাই তারা ওই প্রকল্পটি পুনরায় চালু করে এর সঠিক তদারকির জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সরকাররে প্রতি দাবি জানান।’

কাকরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ তালুকদার মুকুল বলেন, ‘সরকার সোহাগপুরের বিধবাদের প্রতিনিয়ত সাহায্য করে যাচ্ছেন। তবে তাদের জন্য নিয়মিত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা দরকার। আর বিধবা পল্লীর ইতিহাস সংক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’