মসিক নির্বাচন

ঋণখেলাপি হলেও বৈধ কাউন্সিলর প্রার্থী দিলীপ

কাউন্সিলর প্রার্থী দিলীপ সরকার (ছবি– প্রতিনিধি)

জনতা ব্যাংকে দিলীপ সরকারের খেলাপি ঋণ ৮১ হাজার পাঁচ টাকা। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় খেলাপি ঋণের এ তথ্য গোপন করে গেছেন তিনি। তাই তাকে মসিকের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বৈধ কাউন্সিলর প্রার্থী ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এ তথ্য স্বীকার করে মসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ময়মনসিংহের প্রত্যেক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে ৯ এপ্রিলের মধ্যে ঋণখেলাপির তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্য তফসিলি ব্যাংক তথ্য দিলেও জনতা ব্যাংকের চরপাড়া শাখা কর্তৃপক্ষ দিলীপ সরকারের খেলাপিঋণের বিবরণ পাঠায় ১১ এপ্রিল। এদিকে, ১০ এপ্রিল ছিল মনোনয়নপত্র যাচাইবাছাইয়ের শেষ দিন। নির্ধারিত সময়ে ব্যাংক খেলাপি ঋণের বিবরণ না দেওয়ায় যাচাইবাছাইয়ে দিলীপ সরকারকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন নির্বাচন কমিশনের আইনে আর কিছুই করার নেই। তবে প্রতিপক্ষ প্রার্থী যদি দিলীপ সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে অভিযোগ করেন, তবে কোর্ট মনোনয়ন বাতিল করার এখতিয়ার রাখেন। জনতা ব্যাংক চরপাড়া শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই ঋণখেলাপি হয়েও দিলীপ সরকার বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।’

জনতা ব্যাংক চরপাড়া শাখা থেকে পাওয়া তথ্যমতে, দিলীপ সরকার ২০০৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৈরি পোশাক খাতে ব্যবসার কথা বলে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এরপর তিনি আর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেননি। বর্তমানে সুদে-আসলে সেই ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার পাঁচ টাকায়।

ব্যাংকের ঋণ তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র অফিসার কবীর আহমেদ বলেন, ‘ঋণখেলাপি হিসেবে দিলীপ সরকারকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিস্তি পরিশোধ না করায় বর্তমানে তার এই ঋণ মন্দঋণের তালিকায় চলে গেছে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘দিলীপ সরকার নির্বাচন কমিশনে ঋণখেলাপির তালিকা না পাঠানোর জন্য আনিস নামে স্থানীয় এক নেতাকে নিয়ে আসে এবং তার সুপারিশে ১১ এপ্রিল নির্বাচন অফিসে দিলীপ সরকারের খেলাপিঋণের তালিকা জমা দিয়ে আসি।’

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দিলীপ সরকার ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে বলেছিল, ১০ এপ্রিলের আগেই ঋণের সব টাকা জমা দেবে। তার কথা বিশ্বাস করে নির্বাচন অফিসে তার খেলাপিঋণের তালিকা পরে পাঠানো হয়েছে।’

ব্যাংক কর্মকর্তাদের গাফিলতির কথা স্বীকার করে জনতা ব্যাংকের ডিজিএম লায়েস সাদরুল আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে দিলীপ সরকারের দাবি, ‘ব্যাংক কর্মকতারা আমাকে সহায়তা করায় আমার প্রার্থিতা বৈধ হয়েছে। তবে ঋণের সমুদয় অর্থ পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করবো।’

একই এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আল মাসুদ বলেন, ‘জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনৈতিক সহায়তায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সরকারি অর্থ পরিশোধ না করে দিলীপ সরকার কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হলে জনগণ তার কাছে কী পাবে, এটাই সবার প্রশ্ন।’

উল্লেখ্য, আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) মসিক নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। আর ১৮ এপ্রিল প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার কথা।