শোক-চিন্তায় দিশেহারা ইউনুস আলীর পরিবার

শোকে নির্বাক ইউনুস আলীর স্ত্রী, অঝোরে কাঁদছেন বোন (ছবি– প্রতিনিধি)

থেমে থেমে কাঁদছেন তাসলিমা আক্তার। তার চোখে-মুখে শোকের ছাপ। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় ক্ষণে ক্ষণে বিলাপ করে বলছেন, ‘সংসার চলবে ক্যামনে’। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তাসলিমা আক্তার এখন দিশেহারা।

তাসলিমা আক্তার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ইউনুস আলীর স্ত্রী। ইউনুস আলী ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার রঘুনাথপুরের আব্দুল খালেকের ছেলে।

কান্না ধরে আসলে তাসলিমা বলেন, “সর্বশেষ মোবাইল ফোনে সে (ইউনুস) বলেছিল, ‘আমি কাজ পাইছি, আর কোনও চিন্তা নাই। চাকরি করে রোজগারের টাকায় ধারদেনা শোধ করমু। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করায়ে মানুষ করমু। আর সংসারে অভাবও থাকবো না।”

তাসলিমা জানান, রঘুনাথপুর বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করতেন ইউনুস। ব্যবসার আয়ে সংসার চলছিল না। বৃদ্ধ বাবা-মা ও তিন ছেলেমেয়ের সংসারে খুব টানাটানি ছিল। তাই প্রায় ৬ লাখ টাকা সুদ দেওয়ার শর্তে ধার করে গত ২৭ মার্চ ইউনুস সৌদি আরবে যান। প্রায় একমাস বসে থাকার পর কাজ পেয়েছিলেন। আর সেই কাজে যোগ দিতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ইউনুস মারা গেছেন।

তাসলিমা আরও জানান, ভিটে ছাড়া আর কোনও জায়গাজমিও নেই তাদের। বড় ছেলে শাহাদাতের বয়স ৮, কন্যা সুমাইয়া আক্তারের ৫ বছর এবং ছোট মেয়ে মারিয়ার বয়স ৬ মাস।

তিনি জানান, ১২ বছর বয়সে ভ্যান চালানো শুরু করেন ইউনুস। এর দেড় বছরের মাথায় তিনি রঘুনাথপুর বাজারে কাঁচামালের দোকান দেন।

ইউনুসের বাবা আব্দুল খালেক জানান, বিদেশ যাওয়ার কথা বলে গ্রামের বেশ কয়েক জনের কাছ থেকে সুদে ৬ লাখ টাকা ধার নেন ইউনুস। বিদেশ যাওয়ার পর তার ছেলে কাজ না পেয়ে একমাসের মতো বসে ছিলেন।

তিনি আরও জানান, জমিজমা কিছুই নেই তাদের। তাই ধার কীভাবে পরিশোধ করবেন, আর কীভাবে নাতি-নাতনিদের লেখাপড়াসহ সংসার খরচ সামলাবেন এ নিয়ে দিশেহারা তারা। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি সহায়তা করে, তাহলেই অসহায় এই সংসার বাঁচানো যাবে।’

ইউনুসের ছোটবোন নুরুন্নাহার জানান, ইউনুসের মৃত্যুর পাওয়ার পর থেকেই বৃদ্ধ মা আমেনা খাতুন শয্যাশায়ী। কবে ভাইয়ের লাশ দেশে আসবে এবং শেষবারের মতো দেখবেন –এই চিন্তায় আছেন তারা।

প্রতিবেশী মামা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারটা খুবই দরিদ্র। সৌদি আরব ও বাংলাদেশ সরকার সাহায্য করলে এই পরিবারটা বেঁচে যাবে।’

উল্লেখ্য, বুধবার (১ মে) সকালে রিয়াদ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে শাকরায় ১৭ জন বাংলাদেশিকে বহনকারী একটি মিনিবাস চাকা ফেটে উল্টে যায়। এতে ১০ বাংলাদেশি নিহত হন। তারা সবাই আল হাবিব কোম্পানি ফর ট্রেডিং কর্মাশিয়াল কন্ট্রাক্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।