বন্যার্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে জেলার চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসহকারীদের ছুটি বাতিল করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ২০ মেট্রিক টন চাল ও ছয়শ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এগুলো বিতরণও শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি সব বিভাগের কর্মকর্তাদের বন্যা মোকাবিলায় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তবে ত্রাণ ঠিকমতো পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন দুর্গতরা।
দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন,‘আমাদের গ্রামের রাস্তাঘাট, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে এবং হুমকিতে রয়েছে আরও শতাধিক ঘরবাড়ি।’ ভাঙন এলাকায় প্রশাসনের কোনও লোক এখনও যাননি বলেও দাবি তার।
এদিকে, কলমাকান্দা উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার মূল সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন এই সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যান ও পথচারীরা।
কলমাকান্দা উপজেলার তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা কাসেম আলীর স্ত্রী রাবেয়া বলেন, ‘চারদিন ধরে আমরা পানিবন্দি। এখনও কেউ আসেননি। রাস্তার ধরে আমাদের বাড়ি। আমরাই সরকারের সহযোগিতা পাইনি। তাহলে দুর্গম এলাকার মানুষের কী অবস্থা?’ এলাকাবাসীর থেকে জানা গেছে, এখনও ত্রাণ পায়নি এসব অঞ্চলের অনেক মানুষ। স্থানীয় প্রশাসন এখনও ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা তৈরি করতে পারেনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আরিফুল ইসলাম জানান, আজ আর বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যায় প্লাবিত এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি নেমে যাচ্ছে। দুর্গাপুরের চারটি ইউনিয়ন, কলমাকান্দার আটটি ও বারহাট্টার একটি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ২০ মেট্রিক টন চাল ও ছয়শ প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। সকাল থেকে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকেরা ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন বন্যার্তদের মাঝে। তবে পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় নৌকাসহ বিভিন্নভাবে ত্রাণ পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগছে। সকাল থেকে তিনি নিজেও বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন জানিয়ে বলেন, ‘পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত সবার পাশেই থাকবে।’
জেলা সিভিল সার্জন তাজুল ইসলাম জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় চিকিৎসা সহায়তার জন্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত উপজেলার জন্যে একটি করে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সহকারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যজনিত চিকিৎসাসেবা দিতে জরুরি কিছু ওষুধ দিয়ে স্বাস্থ্যসহকারীদের এলাকায় রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।