বিয়ের নামে মোটা অঙ্কের যৌতুক হাতিয়ে চম্পট দিতেন তিনি!

গ্রেফতার আবু বক্কর (হাতে হাতকড়া)

নাম আবু বক্কর। বয়স ৪৫। পেশা—‘বিয়ের নামে প্রতারণা’। সুবিধা মতো পরিচয় ও ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিয়ে করতেন তিনি। একসময় মোটা অঙ্কের যৌতুক হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যেতেন। প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করা ঠিকঠাক চলছিল তার। কিন্তু ৬০তম বিয়েতে আর শেষরক্ষা হলো না। ৬০তম স্ত্রীর মামলায় শনিবার (২ নভেম্বর) রাতে তাকে গ্রেফতার করলো পুলিশ।

আবু বক্কর জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালের চর ইউনিয়নের সভারচর গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে। ৬০তম স্ত্রী নেত্রকোনার পূর্বধলা গ্রামের মাস্টার্সপড়ুয়া রোজী খানমের মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হলে ২৫ বছরে তার ৬০ নারীকে বিয়ে করার তথ্য বেরিয়ে আসে।

পুলিশ জানায়, আবু বক্কর নিজ এলাকায় ‘চিটার বক্কর’ নামে পরিচিত। ২০ বছর বয়সে তিনি প্রথম বিয়ে করেন। এরপর ভালো ব্যবসা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অবিবাহিত, বউ মারা গেছে—এসব কথা বলে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪৫ বছর বয়সে ৬০টি বিয়ে করেছেন। বিয়ে করে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

রোজী খানমের দায়ের করা মামলায় উল্লেখ, এক আত্মীয়ের সঙ্গে পূর্ব-পরিচিত হওয়ার সুবাদে রোজীদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন আবু বক্কর। তিনি নিজেকে একটি ফার্মাসিস্ট কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার পরিচয় দিতেন। অবিবাহিত দাবি করে গত আগস্ট মাসে ‘বকসীগঞ্জের সাধুরপাড়ার কুতুবেরচর গ্রামের আক্রামের ছেলে শাহিন আলম’ পরিচয় দিয়ে রোজীকে বিয়ে করেন বক্কর। সেই থেকে রোজীর বাড়িতে বসবাসও শুরু করেন। এসময় রোজী পরিবারের কাছে যৌতুকের দুই লাখ টাকা দাবি করেন বক্কর। এতে রোজীর পরিবার অপারগতা প্রকাশ করে। পরে বক্কর কৌশলে শ্যালককে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে শ্বশুরের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেন। কয়েকদিন পর থেকেই তাদের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে রোজীর পরিবার খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে, ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন বক্কর।

গ্রেফতারের পর আবু বক্কর পুলিশকে জানান, তিনি ৬০টি বিয়ে করেছেন, রয়েছে সাত সন্তান। শুধু টাকার লোভে বিয়ে করেছেন। টাকা পেলেই ফেলে এসেছেন স্ত্রীদের। নিজ উপজেলা ইসলামপুরের ঠিকানা তিনি কখনই ব্যবহার করতেন না। বর্তমানে নিজ বাড়িতে প্রথম স্ত্রী সাজেদা বেগমসহ দুই স্ত্রী ও সাত সন্তান রয়েছে।

ইসলামপুর থানার ওসি (তদন্ত) আনছার আলী বলেন, ‘প্রতারণা করে বক্কর প্রায় ৬০ বিয়ে করেছেন। তিনি নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। এলাকায় তাকে চিটার বক্কর বলে সবাই চেনে। স্ত্রী রোজী খানমের মামলায় ইসলামপুর থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করে পূর্বধলা থানায় পাঠানো হয়েছে।’