হাওরাঞ্চলে পানি না কমায় বোরোর বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা

 

হওরাঞ্চলে পানি না কমায় বোরো আবাদ করতে পারছে না কৃষকরা

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে পানি না নামায় কৃষকরা বোরো আবাদ নিয়ে চিন্তিত। পানির জন্য তারা বোরোর বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। জেলার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরিসহ আরও কিছু হাওরাঞ্চলের কৃষকরা জানান, সঠিক সময় বোরো বীজতলা প্রস্তুত করতে না পারলে বোরো চাষ দেরি হয়ে যাবে। চাষ দেরি হলে আগাম বন্যায় ফসলহানির আশঙ্কাও থাকবে শতভাগ।

অন্যদিকে কৃষি বিভাগও বলছে আগাম বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তারা এসব অঞ্চলে আগাম জাতের ধান চাষের পরার্মশ দিচ্ছে।

জেলার কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, এবছর নেত্রকোনার দশটি উপজেলায় ১১ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজ তলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে খালিয়াজুরিতে ১ হাজার ২২৭ হেক্টর, মদনে ১ হাজার ১২৯ হেক্টর, মোহনগঞ্জে ১ হাজার ১২৭ হেক্টর, কলমাকান্দায় ১ হাজার ৩৮৮ হেক্টর ও বারহাট্টায় ১ হাজার ১১ হেক্টর জমি রয়েছে। সম্প্রতি ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের সময় হওয়া বৃষ্টিপাতে বীজতলায় এখনও পানি জমে আছে বলে জানান কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ আরও জানায়, এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমি। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৬২ মেট্রিক টন। এরমধ্যে খালিয়াজুরিতে ১৯ হাজার ৭৮০ হেক্টর, মদনে ১৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর, মোহনগঞ্জে ১৭ হাজার ১০ হেক্টর, কলমাকান্দায় ২১ হাজার ২১০ হেক্টর ও বারহাট্টায় ১৫ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হবে। এ উপজেলাগুলোয় সব সময় আগাম বন্যায় ফসল হানির আশঙ্কাও থাকে।

খালিয়াজুরির সঞ্চিব দে বলেন, ‘এবার দেরিতে চারা রোপণ করতে হবে। তাই ফসল ভালো হওয়ার আশা কমছে। আরও ১০-১২ দিন পর বীজ (জালা) ফেললে শীত চলে আসবে। ফলে চারা ভালো হবে না। ভালো চারা না হলে ভালো ফসলও হবে না। আর ফসল পাকতে দেরি হলে আগাম বন্যায় ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে।’

খালিয়াজুরি উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের কৃষক সুকোমল সরকার জানান, প্রায় প্রতিবছর হাওরে আগাম বন্যায় ফসল নষ্ট হয়। এ বছর এখনও বীজ তলা তৈরি সম্ভব হয়নি। তাই ফসল হানির ঝুঁকি বাড়বে।

একই উপজেলার সাধন চৌধুরী জানান, ‘ধনু নদীর উৎস এবং সুরমার মোহনা থেকে উত্তরাঞ্চল খানিকটা উঁচু। অন্যদিকে নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর ধনু নদী থেকে কিশোরগঞ্জের ইটনা পর্যন্ত হাওর এলাকাটি তুলনামূলক নিচু। এ কারণে ইটনা থেকে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যবর্তী মেঘনার মোহনা পর্যন্ত এলাকাটি ভরাট হয়ে গেছে। বিশেষ করে মেঘনার মোহনা থেকে উত্তর দিকে নদী খনন অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে প্রতিবছর অকাল বন্যা থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে না।’

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও হাওরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাওরের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, অসময়ে ভারী বৃষ্টিপাত, দীর্ঘদিন ধরে নদী খনন না করায় পলি জমে ভরাট হওয়া এবং মেঘনা নদীতে তিনটি ব্রিজ নির্মাণের কারণে হাওর থেকে পানি সরতে দেরি হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, হাওরাঞ্চলে আগাম জাতের ধান চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ব্রি-২৮ জাতের ধান বপণ করলে আগাম বন্যায় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। কিছু কিছু এলাকার কৃষকরা বীজতলা তৈরি করে বপণ শুরু করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে বীজতলা তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে।

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, বিভিন্ন সভা সেমিনার করে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের আগাম জাতের ধান চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে  তাদের উন্নত জাত ও অল্প সময়ে ফলন হয় এমন ধান চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।