সাবেক এমপি মুক্তি’র বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তিরময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তির (জাপা) বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে এলাকাবাসীর কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। টাকার জন্য প্রতিদিনই এলাকার অসংখ্য মানুষ ভিড় করছে এমপির ময়মনসিংহ নগরীর কলেজ রোডের ও মুক্তাগাছার বাসভবনে। কিন্তু তার কোনও হদিস মিলছে না। ‘তিনি বাসায় নেই’ জানিয়ে পাওনাদারদের বিদায় করছেন তার স্বজনরা।

পাওনাদার ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়া এলাকার গৃহবধূ জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদকে জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, তার মত এমন পাওনাদারের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। চাকরি দেওয়ার কথা বলে এদের কাছ থেকে সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ ৩ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। টাকা ফেরত পেতে তারা স্থানীয় এমপি ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবুকেও বিষয়টি জানিয়েছেন।

স্থানীয় পাওনাদার সূত্রে জানা যায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন জাপার আহ্বায়ক সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি। মুক্তি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে ময়মনসিংহ ও মুক্তাগাছার অসংখ্য পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন। চাকরির আশায় অনেকেই জমি বিক্রি করে তার হাতে তুলে দিয়েছে নগদ টাকা। কিন্তু এসব পরিবারের কোনও সদস্যের চাকরি হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে পাওনাদারদের ধাওয়া ও তোপের মুখে পড়েন তিনি।

স্থানীয় দাওগাঁও ইউনিয়ন জাপার সভাপতি মো. শাহজাহান অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালে মাদ্রাসার পিয়ন পদের জন্যও তিনি পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন। নিয়োগ দিতে না পারায় এক লাখ টাকা ফেরত দিলেও বাকি টাকা নিয়ে টালবাহানা করছেন। বাসায় থেকেও নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন পাওনাদারদের। এরকম ২৯ জনের তালিকা তার হাতে রয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, প্রতিদিন চাকরি প্রার্থীদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তির বাসভবনে ভিড় জমালে প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হয়। প্রতারণার শিকার ১৯ জনের কাছ থেকে মুক্তি এক কোটির টাকার ওপরে হাতিয়ে নিয়েছে। এখন ফোনও ধরছেন না। বাসভবনে দেখা করতে গেলে তার স্বজনরা বলছেন তিনি বাসায় নেই। পাওনাদারদের রীতিমতো অপমান করে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। এখন পাওনাদাররা জোটবদ্ধ হয়ে মামলা করার কথা ভাবছেন।

স্থানীয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ জানান, পাওনাদাররা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু এমপিকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে জাপার সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কিছু বলছেন না।

তিনি আরও জানান, বিষয়টি সুরাহার জন্য তাকে ৩টি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এরপরও তিনি তার সঙ্গে দেখাও করেননি।

সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তির বক্তব্যের জন্য তার মোবাইল ফোনে (নম্বর-০১৭১১-৭১৫১৩২ ও ০১৭১২-৭১১৪১৬) একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য সাংবাদিক পরিচয়ে এসএমএস পাঠিয়েও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।

ময়মনসিংহ মহানগর জাপা সভাপতি জাহাঙ্গীর আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এসব নিয়ে ক্ষুব্ধ বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ এমপি। এ কারণে তিনি সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তিকে তার বাসভবনে নিষিদ্ধ করেছেন।