নগরীর গাঙ্গিনারপাড় এলাকার হকার চান মিয়া (৫৫)। তিনি বলেন, ‘পুলিশ আসার খবর পাইলেই ফুটপাত থাইকা মালামাল বস্তায় তুইলা দৌড়াইয়ে গলির ভিতরে চলে যাই। পুলিশ চলে গেলে আবারও মালামাল নিয়ে ফুটপাতে আইসা বেচাকেনা করি। এরকম কইরে দিনেরাতে ৩-৪ বার মালামাল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। পুলিশ আইসে মালামাল রাস্তায় ফেইলাও দেয়। নতুন বছরের পেরথম দিন থাইকা এই কইরা বেচাকেনা করতাছি।’
গাঙ্গিনারপাড়ের আরেক হকার দীপক ঘোষ বলেন, ‘নতুন এসপি স্যার আসার আগে হকার নেতা উৎপলের মাধ্যমে ম্যানেজ করে আমরা ফুটপাত ও সড়কে বসে ব্যবসা করতাম। জানুয়ারির শুরু থেকেই প্রতিদিন পুলিশ সদস্যরা ৪-৫ বার করে হকারদের দৌড়ায়ে দেয়। মালামাল নিতে দেরি হলে পুলিশ রাস্তায় মাল ফেলে দেয়। এছাড়া মারধরও করে। দৌড়াদৌড়ির মধ্যে যে টাকা বেচাবিক্রি হয় তাতে লাভ তো দূরে থাক এখন সংসার খরচও তুলতে পারছি না।’
ট্রাংকপট্টি এলাকার হকার জসিম জানান, পুলিশের অত্যাচারে শীতের কাপড় বেচাবিক্রি করতে পারছি না। বেচাবিক্রির মধ্যে পুলিশ আসলে পালাতে হয়। তখন ক্রেতারাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। জানুয়ারিতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করা ছাড়াও সংসারে আরও অনেক খরচ থাকে। শীত পড়ায় ভালো বেচাকেনা হবে এই আশায় ধার করে বেশি করে শীতের কাপড় ঢাকা থেকে এনেছিলেন। ফুটপাতে বসতে না দেওয়ায় বেচাকেনা করতে পারছেন না।
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম জানান, জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে ফুটপাত ও সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদ করতে বারবার সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি। কিন্তু কোনও কথাতে কাজ হয়নি। ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে সড়ক ও ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হয়েছিল। নগরীতে ছিনতাইও বেড়ে গিয়েছিল। নতুন এসপি ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়ায় নগরবাসী খুশি।
তিনি আরও জানান, হকারদের শুধু উচ্ছেদ করলেই হবে না, তাদের পুনর্বাসনে সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসতে হবে।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ফুটপাতে হকার মালামাল নিয়ে বসার কারণে জনসাধারণ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছিল না। বিষয়টি নজরে আসায় বছরের শুরু থেকেই পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ মোতাবেক দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এখনও শতভাগ সফলতা আসেনি। পুলিশ সদস্যদের দেখলেই হকাররা পালিয়ে যায় এবং পুলিশ চলে যাওয়ার পরে মালামাল নিয়ে আবারও তারা বসার চেষ্টা করে। হকারমুক্ত করতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।