যত্রতত্র গড়ে উঠছে ইটভাটা, হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি

ইটভাটাজামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় নিয়ম নীতি না মেনে যেখানে সেখানে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি দফতর ও ঘনবসতি এলাকায় ইটভাটা নির্মাণ করায় কালো ধোয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন উপজেলাবাসী। ফসলি জমি নষ্টের পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশেরও। তবে ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় পরিবেশ অধিদফতর কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

এলাকাবাসী জানান, মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সরকারি কলেজ ও মৎস্য খামার, উপজেলা পরিষদ ও জালালপুর প্রাইমারি স্কুল সংলগ্ন এলাকায় একটি করে এবং কৃষিজমি ও বসতি এলাকায় চারটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এভাবে প্রভাবশালীরা উপজেলায় প্রায় ৩২টি ইটভাটা নির্মাণ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ ইটভাটা ফসলি জমি ও বসতি এলাকায় গড়ে ওঠেছে। এতে করে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব এলাকার উদ্ভিদ। কমে যাচ্ছে ফলন। বাড়ছে মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা।
মেলান্দহের উদনাপাড়া, বজরদ্দিপাড়া ও বুরুঙ্গা গ্রামে গিয়ে কথা হয় উদনাপাড়া গ্রামের কৃষক জয়নাল শেখ, কদ্দুছ মণ্ডল, জাবেদ আলী ও সিদ্দিক মিয়ার সঙ্গে। তারা জানান, বসতি ও ফসলি জমির কাছাকাছি আটটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ভাটার আশপাশে জমি কেটে পুকুরে পরিণত করা হয়েছে। কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। সুপারি ও নারিকেলসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলের উৎপাদন নেই বললেই চলে। যা-ও হয় তার অধিকাংশই নষ্ট।
বজরদ্দিপাড়া গ্রামের কৃষক নুরুল হক, কাদের শেখ, শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের বাড়ির পাশে ক্ষেতের মাঝখানে ইটভাটা। এতে ভাটার চারপাশের ধান উৎপাদন কমে গেছে। নারিকেল গাছে তেমন ফল ধরছে না। ডাবের ভেতরে পানি থাকে না।
ওই এলাকার কৃষক মইনুল মিয়া, সুলতান শেখ, জব্বার মিয়া বলেন, ভাটার জন্য তাদের জমির মাটি বিক্রি করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। কেননা পাশের ক্ষেতের মালিক মাটি বিক্রি করায় তাদের ক্ষেতে পানি দেওয়া যায় না। বারবার ক্ষেতের আইল ভেঙে সীমানা হেরফের হয়ে যায়।
কৃষক মেহের আলী জানান, ইটভাটার মালিকরা পানির দামে টপসয়েল নিচ্ছে। এক হাজার সেপটি মাটি মাত্র ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কিনছেন তারা।
এ ব্যাপারে জামালপুর উন্নয়ন সংঘের পরিচালক, পরিবেশবাদী ও মানবাধীকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘ইটভাটায় জন্য এভাবে মাটি নিয়ে যেতে থাকলে এই এলাকায় আবাদযোগ্য ১০ শতাংশ জমিও থাকবে না। এতে পরিবেশ বিপর্যয়সহ খাদ্য সংকট দেখা দেবে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ইটভাটার নিয়ম রক্ষা জরুরি।’
এ ব্যাপারে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামিম আল ইয়ামীন বলেন, ‘মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জালালপুর স্কুল সংলগ্ন ইটভাটা ও পল্লি উন্নয়ন একাডেমির পাশে ইটভাটা নির্মাণ স্থগিত করতে বলা হয়েছে।’ তবে চলমান ইটভাটার বিষয়ে তিনি কিছু বলননি।