উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সদর উপজেলায় পানি বেড়ে যাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী ৪টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া জেলার শ্রীবরদী উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম, নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী, ভোগাই ও নাকুগাঁও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওইসব এলাকার ৪টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নকলার ৫টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় লাখো মানুষ।
পানির নিচে তলিয়ে আছে চলতি রোপা-আমন মৌসুমের বিপুল পরিমাণ জমির বীজতলা। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক ঘর বাড়ি। এছাড়া শেরপুর-জামালপুর সড়ক পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় গত চার দিন ধরে শেরপুরের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত নিজাম বলেন, ‘কদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল। ভাবছিলাম তেমন কিছু হবো ন। এখন দেখছি, বন্যা হয়ে গেলো। এক রাতের মধ্যেই ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় কোনও মালামালা বের করতে পারিনি। সব নষ্ট হয়ে গেছে।’
রিতা বেগম বলেন, ‘বন্যায় ঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন ঘুমানোর জন্য কাথা-বালিশ কম্বল কিছুই নেই।’
নকলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহানউদ্দীন বলেন, ‘৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক। চলতি আমনের বিপুল পরিমাণ বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনোয়ারুর রউফ বলেন, ‘এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে দুই জন মারা গেছে। পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা দিতে ইতোমধ্যে ২০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া খাবার স্যালাইন, প্যারাসিটামল ও এন্টিবায়োটিকসহ নানা ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।’
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মোহিত কুমার দে বলেন, ‘বন্যায় সদর উপজেলা এবং নালিতাবাড়ীর কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন। জেলায় এ পর্যন্ত ৪৩০ হেক্টর রোপা-আমন, ১২৬ হেক্টর সবজি , ১৫৭ হেক্টর আউশ ধান এবং ৬২ হেক্টর জমির পাট পানির নিচে তলিয়ে আছে। ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে পানি নেমে গেলে।’ তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করতে ৫০ একর জমিতে রোপা-আমন বীজতলা তৈরি করা হবে। সেখান থেকে কৃষকদের চারা সরবরাহ করা হবে।