‘তাড়াতাড়ি চলে আসো, না হয় চাকরি থাকবে না’

‘ফ্লোর ইনচার্জ বাবুল স্যার মোবাইলে কল দিয়ে বলেছেন, আগামী ১ আগস্ট কারখানা খোলা হবে। বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসো, তা না হলে চাকরি থাকবে না। এজন্য আগেভাগেই ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে ভেঙে ভেঙে টঙ্গী যাচ্ছি। কি করবো, চাকরি তো বাঁচাতে হবে। এজন্য দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে কারাখানায় যাচ্ছি।’

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ময়মনসিংহ মহানগরীর বাইপাস মোড়ে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা পোশাককর্মী নুরুল আমিন এসব কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী হালিমা বেগম। ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি পাননি তারা। নুরুল আমিন টঙ্গীর সাহারা মার্কেটের নিট ফেব্রিক্স পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ঈদের দুই দিন আগে স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। 

তিনি বলেন, বাড়ি থেকে সকালে বের হয় শম্ভুগঞ্জ পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশায় এসেছি। এরপর বাইপাস মোড় পর্যন্ত অন্য সিএনজিতে এসেছি। টঙ্গী পর্যন্ত পৌঁছতে পারবো কি-না জানি না।

শুধু নুরুল আমিন নন, গাজীপুর ও ঢাকায় যাওয়ার জন্য শত শত পোশাককর্মীকে ময়মনসিংহের বাইপাস মোড়, ত্রিশাল ও ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানবাহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকেই সিএনজি অটোরিকশা ও পিকআপে গন্তব্যে গেছেন।

শত শত পোশাককর্মীকে ময়মনসিংহের বাইপাস মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়

গাজীপুর চৌরাস্তার নিকি ডাইং পোশাক কারখানার কর্মী তাসমীন আরা বলেন, চৌরাস্তায় যাওয়ার জন্য শেরপুরের নকলা থেকে ভেঙে ভেঙে ফুলপুর হয়ে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এসেছি। এখন লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। রাস্তায় কোনও যানবাহন নেই। কীভাবে যাবো, সে চিন্তায় আছি। সহকর্মীরা জানিয়েছেন আগস্ট মাসের ১ তারিখে কারখানা খুলবে। এজন্য লকডাউনের মধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। আমরা নিরুপায়, যেভাবেই হোক চাকরি বাঁচাতে হবে।

টঙ্গীর পোশাককর্মী জয়নাল আবেদিন বলেন, ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি এসেছিলাম। তখন বলা হয়েছিল কারখানা বন্ধ থাকবে। কিন্তু এখন খুলে দেওয়ায় লকডাউনে কষ্ট করে যেতে হচ্ছে। ১ আগস্ট কারখানায় হাজির না হলে চাকরি চলে যাবে বলে জানানো হয়েছে।

তবে পোশাকশ্রমিক ফেডারেশনের (আওয়াজ) ফিল্ড সুপারভাইজার উবায়দুল হক বলেছেন, কোনও কারখানার মালিক কিংবা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যদি শ্রমিকদের ফোন দিয়ে ১ আগস্ট কাজে যোগদানের কথা বলে; তাহলে এটি বেআইনি হবে। কারণ, আমরা দেশের বাইরের কেউ না। সরকার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটি সবার ভালোর জন্যই দিয়েছে। নির্দেশনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কারখানা পরিচালনা করতে হবে। যদি কারখানা কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা না মেনে ১ আগস্ট থেকে শ্রমিকদের কাজে যোগদান করায়; তাহলে যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে। এজন্য কোনও শ্রমিক, কর্মচারী কিংবা সংগঠনকে দায়ী করতে পারবে না তারা।