যেখানে আকাশ নেমেছে জলে...

উপরে সুবিশাল নীল আকাশ আর নিচে সবুজ পাহাড়ের কোলে টলটলে জলরাশি। কালো জলে হঠাৎ তাকালে মনে হবে আকাশ যেন জলে নেমে এসেছে, পেতেছে সৌন্দর্যের মিতালি। চোখ ধাঁধিয়ে মন কেড়ে নেওয়া এ জলরাশি ‘মায়াবী লেক’র। পূর্বে এ লেক পরিচিত ছিল বোগাগুছা লেক নামে। অপরূপ সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে পাহাড় ঘেরা এ লেককে কেউ কেউ ছোট সুইজারল্যান্ড ও কাশ্মির বলেও ডাকে।

শেরপুর জেলা শহর থেকে আনুমানিক ৩০ কিলোমিটার দূরে বালিঝুড়ি বাজারের একটু আগেই তাওয়াকুচি নামক স্থানে অবস্থিত মায়াবী লেক। লেকের তিন ধারে পাহাড় ঘেরা, এক পাশে ঘন বন। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে তাকালে সত্যি এক মুহূর্তের জন্য মনে হতে পারে আপনি সুইজারল্যান্ড অথবা কাশ্মিরে চলে এসেছেন।

পিচঢালা সড়ক দিয়ে মায়াবী লেকে আসতে আসতে এমনিতেই দু'চোখে ধরা দেবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ধানক্ষেত, পাহাড়ি নদী, দিগন্ত জোড়া মাঠ আর গ্রামীণ পরিবেশ। আরও এগোলে মন কাঁড়বে সড়কের দু'ধারে ঘন বন, ছোট ছোট টিলা। তাওয়াকুচি এলাকায় এসে মেঠোপথে হাঁটতে হবে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা। এরপর দেখা মিলবে আকাঙ্খিত মায়াবী লেকের।

তবে, পাহাড়ে উঠেই মন জুড়াবে এক নিমিষে। লেকের নীল স্বচ্ছ পানিতে দু'চোখ ডুবিয়ে আকাশের দিকে চাওয়ার আগেই দূরে দৃষ্টি যাবে। দেখা যাবে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ের চূড়া। আকাশের মেঘেরা ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাবে রঙ আর আকৃতি। পাহাড়ে সারাদিন বসে থাকলেও ফিরে আসতে মন চাইবে না।

কীভাবে যাবেন
শেরপুর শহর থেকে সিএনজি বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বালিঝুড়ি বাজারে যেতে হবে। আপডাউন ৫০০ টাকার মতো ভাড়া নেবে। বালিঝুড়ি বাজারের একটু আগে তাওয়াকুচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নেমে মাটির রাস্তা ধরে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। তবেই দেখা মিলবে অপরূপ মায়াবী লেকের।

জরুরি কথা
পাহাড়গুলোর কোল জুড়ে বন বিভাগ পরিকল্পিত বনায়ন করছে। এখন গাছের চারাগুলো বেশ ছোট। পর্যটকের ভিড়ে গাছের ক্ষতি সাধন হয় বলে মায়াবী লেকে যেতে বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবুও পর্যটকের কমতি নেই লেকে। প্রতিদিন শতশত মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে মায়াবী লেক দেখতে। লেকের আশপাশে সাড়ে তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনও বাজার বা দোকানপাট নেই। তাই সঙ্গে পানি ও খাবার নিতে ভুল গেলে চলবে না। আর কোনোভাবেই লেকের আশপাশের এলাকায় পানির বোতল বা নোংরা জিনিসপত্র ফেলা যাবে না।

শেরপুরে আরও ঘুরতে পারেন
মায়াবী লেক ছাড়াও সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরে আরও বেড়াতে পারেন গজনী অবকাশ কেন্দ্র, নাকুগাঁও স্থল বন্দর, মধুটিলা, রাজার পাহাড়, নয়াবাড়ির টিলা ও পানিহাটা-তারানি পাহাড়।