যৌন হয়রানি নাকি ফায়দা হাসিলের চেষ্টা? 

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে একটি পক্ষ ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। সার্জারি বিভাগের পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্বাচিপের কয়েকজন নেতা এই ঘটনার পেছনে রয়েছেন বলে উল্টো অভিযোগ করেছেন তারা। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং মূল ঘটনা সামনে তুলে ধরার দাবিতে রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। কর্মসূচি থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকৃত ঘটনা সামনে তুলে ধরার দাবি জানানো হয়। 
 
স্থানীয় সূত্র জানায়, কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন কিছু শিক্ষার্থী। এ সময় ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে ওই অধ্যাপকের অপসারণ দাবি করেন তারা। পরের দিন ২৪ ফ্রেবুয়ারি দুপুরে মেডিক্যাল কলেজের সম্মেলন কক্ষে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. চিত্ত রঞ্জন দেবনাথের সঙ্গে বৈঠক করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

সভায় কলেজের অধ্যাপক ছাড়াও মিড লেভেল চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তায়েবা তানজিলা মির্জাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. লোকমান হোসেন চৌধুরী ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল হান্নান।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন- সার্জারি বিভাগের পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীরা ওই অধ্যাপককে চাপে ফেলতেই যৌন হয়রানি ও জামায়াত শিবির কানেকশনের নাটক সাজিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ৫৩ ব্যাচের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলা হয়। অথচ বৃহস্পতিবার কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে শিক্ষকদের সভায় ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন ওই ব্যাচের কেউ এমন অভিযোগ করেননি। 

অভিযোগ উঠেছে স্বাচিপের কেন্দ্রীয় এক নেতার ভাইসহ স্থানীয় এক নেতা ও মেডিক্যাল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের পেছনে আন্দোলনে এতে ইন্ধন দিচ্ছেন। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও রয়েছে এই খবর। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের এম-৫৩ ব্যাচের কথিত যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রীকে খুঁজছেন। 
 
সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মনির হোসেন ভূইয়া বলেন, অতীতে লেখাপড়া না করা অনেক শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে এম-৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৬ জন সার্জারি বিষয়ে ফেল করার পর তাদের পাস করানোর চাপ দেওয়া হয়। তবে সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ তাতে রাজি হননি। এ কারণেই ফেল করা শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে একটি গোষ্ঠী অভিযোগ তুলেছে। তদন্ত করে এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবিতে কলেজের সর্বস্তরের শিক্ষক, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। সোমবার থেকে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করছেন, এমনটাও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এম-৫৩ ব্যাচের ২২০ জনের মধ্যে সার্জারি বিষয়ে ৪৬ জন ফেল করেছেন। ফেল করাদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগ কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসান। ফেল করেই ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক একটি কুচক্রী মহলকে সঙ্গে নিয়ে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। সুষ্ঠু তদন্ত হলেই মূল রহস্য বের হয়ে আসবে বলে আশাবাদী তিনি।  
 
অভিযোগ ও আন্দোলনের বিষয়ে জানতে মেডিক্যাল কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসানের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 
 
কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. চিত্ত রঞ্জন দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এম-৫৩ ব্যাচের কোনও শিক্ষার্থীর থেকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এমনকি আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকেও কোনও অভিযোগ করা হয়নি। তবে পুরো বিষয়ের তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।