নিরাপদে বাংলাদেশি নাবিকরা, ইঞ্জিনিয়ার রাজিবের পরিবারে স্বস্তি

ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়া ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই খবর শুনে ময়মনসিংহের মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকনুজ্জামান রাজিবের (২৬) পরিবারে স্বস্তি ফিরেছে।

রাজিবকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পরিবারকে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। বিএসসি কার্যালয় থেকে রাবিজের পরিবারকে জানানো হয়েছে, বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের ২৮ নাবিককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা এখন আশঙ্কামুক্ত। সবাই সুস্থ আছেন।

আরও পড়ুন: জাহাজে চাকরির প্রথম যাত্রায় ইউক্রেনে গিয়ে বিপদে রাকিব 

বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ) রাত ৮টার দিকে রাজিবের বড় ভাই কামরুজ্জামান সোহেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএসসি কার্যালয় থেকে আমাদের জানানো হয়েছে- রাজিবসহ আটকে পড়া জাহাজের ২৮ নাবিককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই খবর জানার পর আমাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তবে এখনও রাজিবের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি আমরা। শুনেছিলাম, রাজিবসহ অন্যান্য নাবিকরা কঠিন সময় পার করছেন। তাদের জাহাজে এক মাসের খাদ্য মজুত আছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সিস্টেম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফ্রিজের সব খাদ্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। সাগরের বিশেষ স্থানে মাইন পুঁতে রাখার কারণে নাবিকরা জাহাজ থেকে নেমে তীরে উঠতে পারেননি। তবে তারা নিরাপদে আছেন।’

রোকনুজ্জামান রাজিব ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ১৫৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন। 

আরও পড়ুন: ইউক্রেনে আটকে পড়া জাহাজ থেকে বাংলাদেশিদের বাঁচার আকুতি

সম্প্রতি ইউক্রেনে রাশিয়ার রকেট হামলার শিকার বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটিতে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ওই জাহাজে দায়িত্বপালন করছেন। ইতোমধ্যে ওই জাহাজে রকেট হামলায় একজন মারা গেছেন। বাকিরা আতঙ্কিত রয়েছেন বলে ভিডিওবার্তা দিয়েছিলেন।

রোকনুজ্জামান রাজিব ময়মনসিংহ সদরের কাঁচিঝুলির জোবেদ আলী রোডের মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর ছেলে। তিনি চার মাস আগে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটিতে থার্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। তার দুই বছর বয়সী এক ছেলেসন্তান রয়েছে।

রাজিবের স্ত্রী সিলভিয়া জাহান বলেন, ‘রাজিব ভিডিওবার্তা দিয়েছেন। দেশে ফেরার জন্য কান্নাকাটি করছেন। আমি স্বামীকে ফেরত চাই। আপনারা আমার স্বামীকে এনে দেন।’

আরও পড়ুন: ‘ইউক্রেনে নিহত নাবিকের লাশ আনা কঠিন’

বিএসসি কার্যালয় সূত্র জানায়, জাহাজটি ইউক্রেনের বন্দর থেকে পণ্য ভর্তি করে ইতালির বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় ওই বন্দর থেকে পণ্য লোডিং কাজ বাতিল করা হয়। এ কারণে জাহাজটি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙর করে রাখা হয়। জাহাজটিতে অন্তত ২৫ দিনের রসদ মজুত আছে। তুরস্কের এরেগলি বন্দর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি খালি জাহাজটি অলভিয়া বন্দরের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। ২২ ফেব্রুয়ারি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছে। এরই মধ্যে ঘটে দুর্ঘটনা।

আরও পড়ুন: ইউক্রেনে জাহাজে থাকা ২৮ বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে

বৃহস্পতিবার রাতে আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের ২৮ নাবিককে জাহাজ থেকে উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বন্দরের কাছে জাহাজটি ছিল। একটি উদ্ধার জাহাজ দিয়ে নাবিকদের তীরে আনা হচ্ছে। সবাই নিরাপদে আছে।