হারিয়ে যাওয়া মাছটির কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন

এবার অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ডানকনা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। চলতি বছরের মার্চ মাসে ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্রে এ সফলতা অর্জন করেন তারা। গবেষক দলে ছিলেন- মৎস্য বিজ্ঞানী মো. রবিউল আউয়াল, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শাহা আলী।

এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় সব মাছকে পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের আওতায় চলতি বছর প্রথম সুস্বাদু ডানকনা মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা অর্জিত হয়েছে। চলতি বছর আরও আটটি দেশীয় মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা হাতে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে, গত ২/৩ বছরে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ বছর ঢেলা, রাণী, বাতাসি, পিয়ালি, খলিশা ইত্যাদি মাছের ব্যাপক পোনা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে এসব দেশীয় মাছের চাষাবাদে পোনা প্রাপ্তি সহজ হবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। গবেষণার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সব দেশীয় মাছকে খাবারের পাতে ফিরিয়ে আনা হবে।’

মহাপরিচালক আরও জানান, এ লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

আবহমান বাংলার অতি পরিচিত দেশীয় প্রজাতির ছোট একটি মাছ ডানকনা। এ মাছটিকে স্থানীয়ভাবে ডাইরকা, ডানখিনা, দাড়কিনা, ডানকানা, দারকি, দারকা, চুক্কনি, দাইড়কা ইত্যাদি নানা নামে ডাকা হয়। মাছটি দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত (গাঙ্গেয় প্রদেশ ও আসাম), মিয়ানমার, পাকিস্তান, নেপাল ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়। বহুল পরিচিত ও সুস্বাদু মাছটি এখন বিলুপ্তির পথে। এ মাছের পুষ্টিগুণ অন্যান্য ছোট মাছের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম মাছে ভিটামিন-এ ৬৬০ মাইক্রোগ্রাম আরএই, ক্যালসিয়াম ৮৯১ মিলি গ্রাম, আয়রন ১২ মিলি গ্রাম ও জিংক ৪ মিলি গ্রাম পাওয়া যায়। 

একসময় মাছটি প্রচুর পাওয়া গেলেও জলাশয় সংকোচন, পানি দূষণ ও অতি আহরণের ফলে মাছটির বিচরণ ও প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ায় ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে মাছটি বাংলাদেশে বিপন্নের তালিকায়। মাছটির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্রে  গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে।