‌‘বৃষ্টি আইলে এহন আর ভিজতে হইবো না আমাগো’

‘দেশে যুদ্ধ শুরুর পর বাড়ি ছেড়ে বাবা পালাইয়া আইছিল মদন থানায়। তহন থাইকা মাইনষের বাড়ি আর বাজারের ভাঙা ঘরে বসবাস করছি। জন্মের পর থাইকা কষ্টের জীবন আমার। বিয়া হইছে ২৫ বছর আগে। কিন্তু স্বামীরও কোন জায়গা জমি না থাকায় জীবন কাটাইছি ভাঙা ঘরে। বৃষ্টি আইলেই ভিজতে হইছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমারে জায়গাসহ পাকা বাড়ি বানাইয়া দিছে। বৃষ্টি আইলে এহন আর ভিজতে হইবো।’

কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার মদন উপজেলার মদন সদর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী আনোয়ারা বেগম (৫০)। তিনি মদন পৌর সদরের মনোহর গ্রামের কাজল মিয়ার স্ত্রী।  

আনোয়ারা বেগম জানান, ২৫ বছর আগে মনোহরপুর গ্রামের কাজল মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর কোনও ঘরবাড়ি না থাকায় মগড়া নদীর সেতুপাড়ের একটি ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে দিন কাটিয়েছেন। কিছু দিন আগে পৌর সদরের অবৈধ দখল উচ্ছেদে ঘর হারান। এরপর থেকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস শুরু। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নজরে আসলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় মদন দক্ষিণ পাড়া গ্রামে আনোয়রা বেগমের নামে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।

নতুন ঠিকানা পেয়েছেন মদন উপজেলার ৫০টি পরিবার

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর উদ্বোধনের পর দুই শতক জমি ও একটি পাকা ঘর পেয়েছেন আনোয়ারা বেগম। শুধু আনোয়ারা বেগম নন, তার মতো মদন উপজেলার আরও ৫০টি পরিবার নতুন ঠিকানা পেয়েছেন। অপরদিকে মদন উপজেলায় ‘ক’ শ্রেণীর ভূমিহীন বা গৃহহীন কোনও পরিবার থাকছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় মদন উপজেলায় ২১১টি পরিবার জায়গাসহ পাকা ঘর পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫৬টি ঘর নির্মাণ করে সুবিধাভোগীদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যায়ে ৮০টি ঘর ও দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫টিসহ মোট ১০৫টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এবার তৃতীয় পর্যায়ে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে ৫০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই ৫০টি ঘর মঙ্গলবার ভিডিও কন্ফারেন্সেসের মাধ্যেমে উদ্ভোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মদন সদর ইউনিয়ের দক্ষিণপাড়া গ্রামে আশ্রয়ণের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ৭৭টি পরিবার ঘর পেয়েছেন। বসবাসকারীদের জীবনমানের কথা চিন্তা করে সরকার ওই স্থানে মসজিদ, কবরস্থান, শতভাগ বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে একটি পুকুরও খনন করা হয়েছে। জায়গাসহ পাকা ঘর ও সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ায় খুবই খুশি সুবিদাভোগীরা।

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ বলেন, খুবই স্বচ্ছতার সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সেই সঙ্গে মদন উপজেলাকে ‘ক’ শ্রেণীর ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরও যদি কোনও ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাওয়া যায়, তাৎক্ষণিক প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।