নেত্রকোনায় গত দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। কনকনে মৃদু হিমেল হাওয়া আর কুয়াশায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। মোটা জামাকাপড় গায়ে জড়িয়ে এবং খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শীতার্ত অসহায় লোকজন।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এ অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছে স্কুল-কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের লোকজন। তাদের প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করেই ভোরবেলায় নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটতে হচ্ছে।
জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলা শহরের অটোরিকশাচালক আকবর আলী বলেন, ‘কুয়াশা আর ঠান্ডার কারণে ভোরে গাড়ি নিয়ে বের হতে পারি না। বের হলেও দিনের বেলায় লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। লোকজন খুব একটা বের হয় না। তাই যাত্রী কম। সারা দিনে আগে যেখানে ৫০০ টাকা পেতাম, সেখানে এখন ৩০০ টাকাও হয় না।’
একই এলাকার কলেজশিক্ষার্থী সাইফুল আলম জানান, ‘কোচিং করতে ভোরবেলা ঘর থেকে বের হতে হয়। কিন্তু কুয়াশা ও প্রচণ্ড শীতের কারণে চলাচলে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে।’
এদিকে, জেলার হাওরাঞ্চলের মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলার সাধারণ মানুষ শীতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বেশি। কারণ, পুরো হাওরাঞ্চলজুড়ে চলছে বছরের প্রধান ও একমাত্র ফসল বোরো ধানের চাষাবাদ। এই বোরো ধান উৎপাদন করেই হাওর এলাকার কৃষকরা তাদের সারা বছরের খাদ্য মজুত করেন। তাই তারা কনকনে শীতের কারণে শ্রমিক সংকটে পড়েছেন তারা। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও মিলছে না প্রয়োজনীয় কৃষিশ্রমিক। এ অবস্থায় তীব্র শীতকে হার মানিয়েই কৃষকরা তাদের বোরো আবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার পাঁচহাট গ্রামের কৃষক আলম মিয়া বলেন, ‘বোরো ধানই আমাদের হাওরাঞ্চলের একমাত্র ফসল। এই ফসল দিয়ে আমাদের সারা বছর চলে। শীতের শুরু থেকেই আমাদের বোরো ধান চাষাবাদ শুরু হয়েছে। আবাদ প্রায় শেষ। এখন চলবে পরিচর্যার কাজ। কিন্তু শীতের কারণে আমাদের খুব দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বেশি টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই শীতের জ্বালা সহ্য করেই আমরা বোরো চাষাবাদ করছি।’
এ ছাড়া তীব্র শীতে বেড়েছে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগবালাই। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে ছোট শিশুরা সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া এবং বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।
নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু সাঈদ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ এখন বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগী প্রতিদিনই বাড়ছে।’
স্থানীয় আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ৬টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘এরই মধ্যে জেলার ১০টি উপজেলায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শীতার্ত মানুষের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরকারি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং তা চলমান রয়েছে।’